আগে কোথায় খেলেছেন সেটাই ভালোভাবে জানা নেই অনেকেরই! ম্যাচের আগে চমক জাগিয়ে এলিস আল ইসলামের হাতে অভিষেক ক্যাপটা যখন তুলে দিল ঢাকা ডায়নামাইটস, তখন অনেকের চোখেই বিস্ময়! সেই এলিস শুভাগতের বলে মিঠুনের টানা দুই সহজ ক্যাচ ফেলে দিলে, সাকিবের মনের অবস্থা চোখে-মুখে ফুটে ক্যামেরায় ধরা পড়ল।
পরে নবাগত এলিসই ক্যামেরায় ধরা পড়লেন বারবার। তখন আর ক্যাচ হাতছাড়ার বিব্রত-বিধ্বস্ত ভাবটা নেই, তখন যে তিনি বিপিএলে অভিষেকেই হ্যাটট্রিক করে ফেলা অফব্রেক বোলার। বাংলাদেশ ক্রিকেটাকাশের নাতি-দীর্ঘ তালিকায় নবযুক্ত সম্ভাবনাময় সম্পদ।
আরও পড়ুন: রোমাঞ্চের পারদচড়া ম্যাচে মাশরাফীদের হারালেন সাকিবরা
এলিসের দুই ভুলের মাসুল তুলে ম্যাচটা ঢাকার হাত থেকে বের করে নিচ্ছিলেন রংপুর রাইডার্সের দুই ব্যাটসম্যান রাইলি রুশো ও মোহাম্মদ মিঠুন। ক্রমে ঢাকাও যেন হার মেনে নিচ্ছিল। যার ভুলে এতদূর গড়াল ম্যাচ, সেই এলিস সময়মতো প্রতিদান দিলেন সাকিবের আস্থার। সেটাও বিপিএলের ইতিহাসে জায়গা করে নিয়ে।
বিপিএল ইতিহাসে অভিষেকে পাঁচ উইকেট নেয়ার কীর্তি আছে আফিফ হোসেন ধ্রুবর। পাঁচ উইকেট না পেলেও এলিস ছাড়িয়ে গেলেন আফিফকেও। বিপিএলে প্রথম বোলার হিসেবে অভিষেকেই হ্যাটট্রিক পেলেন এই ২২ বছর বয়সী অখ্যাত অফস্পিনার। সেই হ্যাটট্রিকে ২ রানের রোমাঞ্চকর জয়ও পেয়েছে তার দল ঢাকা ডায়নামাইটস।
ম্যাচের সপ্তম ওভারে প্রথমবার বল হাতে পান এলিস। সেই ওভারে সাত রান হজম করার পর তাকে কিছুক্ষণের জন্য বিরতি দিয়ে একবারে ষোড়শ ওভারে আনেন সাকিব। রংপুরের প্রয়োজন তখন ৩০ বলে ৪২। উইকেটে জমে গেছেন রাইলি রুশো ও মিঠুন। সেই ওভারে ৫ রান দিয়ে সাকিবকে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছেন, সঙ্গে উপহার দিয়েছেন ৮৩ রান করা রুশোর উইকেটটিও।
দলীয় আঠারো ও নিজের ব্যক্তিগত তৃতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসে বড় দাও মারেন এলিস। শুরুর তিন বলে একটি করে রান দেন। চতুর্থ বলে স্ট্রাইকে ৪৯ করা মিঠুন। সেই বলে রংপুর উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যানকে পরিষ্কার বোল্ড করলেন।
পঞ্চম বলে রংপুর অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা দাঁড়ানোরই সময় পেলেন না। তাকেও বোল্ড করে সাজঘরের পথ দেখান ঢাকার এ তরুণ স্পিনার।
অভিষেকেই হ্যাটট্রিকের সামনে দাঁড়ানো এলিসের ওভারের শেষ বলটি মোকাবেলা করতে আসেন অভিজ্ঞ ফরহাদ রেজা। তাকেও সময় দিলেন না এলিস। স্লিপে সাকিবের ক্যাচ বানিয়ে শুরু করেন হ্যাটট্রিকের বাঁধনহারা উদযাপনও।
এলিসের কীর্তি এখানেই শেষ নয়। রান তাড়ায় দলের হয়ে প্রতিপক্ষের শেষ ওভারটি করতে বুকে কাঁপুনি লাগে অনেক অভিজ্ঞ বোলারেরই। সেখানে অভিষেকেই দলের শেষ ওভার করতে আসেন এই স্পিনার। রংপুরের প্রয়োজন তখন ১৪। শুরুর দুই বলে টানা চার মেরে এলিসকে খলনায়ক বানানোর প্রস্তুতি সারছিলেন শফিউল ইসলাম। কিন্তু বাকি চার বলে মাত্র তিন রান দিয়ে নিজেকে আর ভিলেন হতে দেননি। শেষে দলকে দুই রানে জিতিয়ে নিজেও হাতে তুলেছেন ম্যাচ সেরার ট্রফি।
টি-টুয়েন্টিতে অভিষেকে আগে কেউ হ্যাটট্রিক পাননি। এমন কীর্তির দিনে এলিস ৪ ওভারে ২৬ রান খরচায় ৪ উইকেটে কোটা পূর্ণ করেছেন।