জিকা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলে অবিকশিত মস্তিষ্কের কারণে ছোট আকৃতির মাথা নিয়ে শিশু জন্ম গ্রহণের বেশ কয়েকটি ঘটনায় বিশ্ব জুড়েই জনস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)। এই ভাইরাসের মোকাবেলায় যৌথ উদ্যোগ প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।
ভাইরাসটি ভয়ঙ্কর পরিণতি নিয়ে বিস্তৃত আকারে এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশেষজ্ঞরা। এর সংক্রমণের ফলে হাজারো শিশু অবিকশিত মস্তিষ্ক নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে।
জিকার জন্য ডাব্লিউএইচও’এর জারিকৃত সতর্কতা ইবোলার মতোই একই পর্যায়ের। এর মানে জিকা ভাইরাসে সৃষ্ট সংক্রমণ প্রতিরোধে দ্রুততার সাথে গবেষণা এবং সাহায্যমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ডাব্লিউএইচও’এর ডাইরেক্টর জেনারেল মার্গারেট চ্যান জিকা’কে ‘অস্বাভাবিক ঘটনা’ উল্লেখ করে এর জন্য সমন্বিত পদক্ষেপের প্রয়োজনিয়তার কথা জানিয়েছেন।
“২০১৪ সালে ফ্রেঞ্চ পলিনেশিয়ার মতো সম্প্রতি ল্যাটিন আমেরিকায় মাইক্রোসিফালি (ছোট আকৃতির মাথা) এবং অন্যান্য স্নায়বিক অস্বাভাবিকতাজনিত বেশ কয়েকটি ঘটনার কারণে সৃষ্ট আন্তর্জাতিক উদ্বেগের প্রেক্ষিতে জনস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করছি।”
তিনি বলেন, গর্ভবতী মহিলা ও তাদের সন্ত্বানকে ক্ষতি থেকে সুরক্ষা এবং এই ভাইরাস ছড়ানো মশা নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
গর্ভবতী মহিলাদের উদ্দেশ্যে তিনি উপদেশ দেন, আরও পরে জিকা ভাইরাস আক্রান্ত এলাকায় ভ্রমণের বিষয়টি বিবেচনা এবং জিকা আক্রান্ত এলাকায় বসবাসরতরা যেন তাদের চিকিৎসকদের পরামর্শ নেয় এবং মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য নিরোধক পরিধান করে
রোগটি নিয়ে অনিশ্চিয়তার মধ্যেই জরুরি অবস্থা ঘোষণার বিষয়টিকে ন্যায্যতা দান করতে অপেক্ষা করার সময় নেই বলে জানান ডা. চ্যান।
ইবোলার প্রকোপের ঘটনায় জনসাধারণের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষনার ক্ষেত্রে অনেক বিলম্ব করায় ডাব্লিউএইচও’কে কঠোর সমালোচনার মধ্যে পরতে হয়।
জিকা প্রতিরোধে এখন কোন টিকা বা চিকিৎসা নেই। এর সংক্রমণ এড়িয়ে চলার একমাত্র উপায় হচ্ছে এই ভাইরাস ছড়ানো এডিস মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করা।
ডাব্লিউএইচও ইতিমধ্যে সতর্কতা জারি করেছে যে জিকা আমেরিকার প্রায় সর্বত্র ‘বিস্ফোরণের মতো ছড়িয়ে’ পড়তে পারে। ব্রাজিলসহ ২০ টিরও বেশি দেশে এই ভাইরাস সংক্রমণের তথ্য পাওয়া গেছে।
গত বছরের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র ব্রাজিলেই চার হাজারের মতো মাইক্রোসেফালি (অবিকশিত মস্তিষ্ক নিয়ে জন্ম নেয়া) শিশুর ঘটনার তথ্য পাওয়া গেছে।
অধিকাংশ সংক্রমণই ধীর প্রকৃতির এবং এর জন্য ক্ষেত্রবিশেষে সামান্য বা কোন লক্ষণই থাকে না। যদিও গুইল্যাইন-ব্যার সিনড্রোম নামক বিরল পক্ষাঘাতগ্রস্থতার কয়েকটি তথ্য পাওয়া গেছে।
সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্য হুমকিটি গর্ভে থাকা শিশুর জন্য বলে ধারণা করা হচ্ছে।