‘ভুল আসামি’ হয়ে ২৬ মামলায় প্রায় ৩ বছর কারাগারে থাকার পর জামিনে মুক্তি পাওয়া পাটকল শ্রমিক জাহালম এখন কেমন আছেন তা আগামী বুধবার তার কাছ থেকেই জানবেন হাইকোর্ট।
এর আগে জাহালমকে আটক ও কারাবাসের ঘটনার বিষয়ে হলফনামা আকারে দেওয়া দুদকের বক্তব্য সম্বলিত প্রতিবেদন গত ৬ মার্চ শুনানির জন্য হাইকোর্টে উঠে। ওইদিন আদালত বাংলাদেশ ব্যাংকসহ পাঁচটি বাণিজ্যিক ব্যাংককে পক্ষভুক্ত করার দুদকের আবেদন গ্রহণ করেন এবং জাহালমকাণ্ডে সম্পৃক্ত অন্য ব্যাংকগুলোকে পক্ষভুক্ত করার নির্দেশ দেন আদালত।
সেই সাথে জাহালমের বিরুদ্ধে দুদকের হওয়া সব মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণী (এফআইআর), অভিযোগপত্র (সিএস)সহ যাবতীয় নথি দাখিল করতে বলে ১০ এপ্রিল এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন।
সে ধারাবাহিকতায় আজ (১০ এপ্রিল) বিষয়টি শুনানির জন্য এলে দুদকের পক্ষ থেকে সময়ের আবেদন করা হয়। এরপর বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এবিষয়ে শুনানির জন্য আগামী বুধবার দিন ধার্য করেন।
আর জাহালম এখন কেমন আছেন ও কেমন জীবন যাপন করছেন তা ওইদিন তাকে আদালতে এসে বলতে বলা হয়েছে বলে জানান তার আইনজীবী অমিত দাশগুপ্ত।
এর আগে গত ৩ ফেব্রুয়ারি জাহালমের জামিন আদেশের সময় হাইকোর্টের এই বেঞ্চ বলেন: জামিন নেয়ার মাধ্যমেই এ বিষয়টির শেষ হয়ে যাচ্ছে না। এ ঘটনার পেছনের ঘটনা কী, কারা এর সাথে জড়িত তা খুঁজে বের করতে হবে।
‘ভুল আসামি’ হয়ে ২৬ মামলায় প্রায় ৩ বছর কারাগারে থাকা পাটকল শ্রমিক জাহালমকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি সব মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে ওইদিনই মুক্তির নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই আদেশ দেন। হাইকোর্টের ওই জামিন আদেশের কয়েক ঘণ্টা পরই কারাগার থেকে মুক্তি পান জাহালম।
এর আগে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়ানো লোকটির বয়স ৩০-৩২ বছরের বেশি না। পরনে লুঙ্গি আর শার্ট।
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এ বিচারকের উদ্দেশে তাকে বারবার বলতে দেখা যায়, ‘স্যার, আমি জাহালম। আমি আবু সালেক না,আমি নির্দোষ। আবু সালেকের বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির ২৬টি মামলা হয়েছে।
কিন্তু আবু সালেকের বদলে জেল খাটছেন, আদালতে হাজিরা দিয়ে চলেছেন এই জাহালম। যিনি পেশায় পাটকল শ্রমিক। এরপর তদন্ত করে দুদক বলেছে, জাহালম নিরপরাধ। একই মত দেয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।’’
পত্রিকায় প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনটি গত ২৮ জানুয়ারি হাইকোর্টের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশগুপ্ত। এরপর বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ জামিন আদেশ দেন।