যাদের কারণে ‘ভুল আসামি’ হয়ে জাহালমের ৩ বছর কারাবাস এবং যারা এ ঘটনার জন্য দায়ী ‘তাদের আমরা দেখব’ বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বুধবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ কথা বলেন। এ সময় ভাইকে নিয়ে আদালতে উপস্থিত ছিলেন জাহালম।
জাহালমকে আটক ও কারাবাসের ঘটনার বিষয়ে হলফনামা আকারে দেওয়া দুদকের বক্তব্য সম্বলিত প্রতিবেদন গত ৬ মার্চ শুনানির জন্য হাইকোর্টে ওঠে। ওইদিন আদালত বাংলাদেশ ব্যাংকসহ পাঁচটি বাণিজ্যিক ব্যাংককে পক্ষভুক্ত করার দুদকের আবেদন গ্রহণ করেন এবং জাহালমকাণ্ডে সম্পৃক্ত অন্য ব্যাংকগুলোকে পক্ষভুক্ত করার নির্দেশ দেন।
সেই সঙ্গে জাহালমের বিরুদ্ধে দুদকের হওয়া সব মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণী (এফআইআর), অভিযোগপত্র (সিএস)সহ যাবতীয় নথি দাখিল করতে বলে ১০ এপ্রিল এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন।
কিন্তু ১০ এপ্রিল বিষয়টি শুনানির জন্য এলে নথি দাখিল করতে দুদকের পক্ষ থেকে সময়ের আবেদন করা হয়। এরপর আদালত বিষয়টির শুনানির জন্য ১৭ এপ্রিল দিন ধার্য করেন এবং জাহালম কেমন আছেন ও কেমন জীবন যাপন করছেন তা ১৭ এপ্রিল আদালতে এসে তাকে বলতে বলা হয়। সে অনুযায়ী আজ জাহালম হাইকোর্টে আসেন।
তবে আজ জাহালমের মামলার নথি হাইকোর্টের এ বেঞ্চে না আসায় আজ হাইকোর্ট জাহালমের কোনো কথা শোনেননি। এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আদালত আগামী ২ মে দিন ধার্য করেন। এ সময় আদালত দুদকের আইনজীবীকে জাহালমকাণ্ডে দুদকের করা তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি হলে তা আগামী শুনানিতে নিয়ে আসতে বলেন। এরপর আদালত আজকের মতো শুনানি মুলতবি করেন।
এর আগে গত ৩ ফেব্রুয়ারি জাহালমের জামিন আদেশের সময় হাইকোর্টের এই বেঞ্চ বলেন: জামিন নেয়ার মাধ্যমেই এ বিষয়টির শেষ হয়ে যাচ্ছে না। এ ঘটনার পেছনের ঘটনা কী, কারা এর সাথে জড়িত তা খুঁজে বের করতে হবে।
‘ভুল আসামি’ হয়ে ২৬ মামলায় প্রায় ৩ বছর কারাগারে থাকা পাটকল শ্রমিক জাহালমকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি সব মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে ওইদিনই মুক্তির নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই আদেশ দেন। হাইকোর্টের ওই জামিন আদেশের কয়েক ঘণ্টা পরই কারাগার থেকে মুক্তি পান জাহালম।
এর আগে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়ানো লোকটির বয়স ৩০-৩২ বছরের বেশি না। পরনে লুঙ্গি আর শার্ট।
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এ বিচারকের উদ্দেশে তাকে বারবার বলতে দেখা যায়, ‘স্যার, আমি জাহালম। আমি আবু সালেক না,আমি নির্দোষ। আবু সালেকের বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির ২৬টি মামলা হয়েছে।
কিন্তু আবু সালেকের বদলে জেল খাটছেন, আদালতে হাজিরা দিয়ে চলেছেন এই জাহালম। যিনি পেশায় পাটকল শ্রমিক। এরপর তদন্ত করে দুদক বলেছে, জাহালম নিরপরাধ। একই মত দেয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।’’
পত্রিকায় প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনটি গত ২৮ জানুয়ারি হাইকোর্টের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশগুপ্ত। এরপর বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ জামিন আদেশ দেন।