চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

জাস্টিন ট্রুডো, সৈয়দ আবুল হোসেন আর প্রতিষ্ঠিত সত্য…

এক.
সম্প্রতি কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাষ্টিন ট্রুডো এসএনসি লাভালিনে আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনায় তার দলের সাবেক দুই প্রভাবশালী মন্ত্রীকে দল থেকে বহিস্কার করেছেন। তাদের শুধু বহিষ্কারই নয় জাষ্টিন ট্রুডো পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন তারা তার ও তার দলের ভাবমূর্তি দেশে ও বিদেশে ক্ষুণ্ণ করেছেন। ট্রুডো তার সরকারের সাবেক আইনমন্ত্রী জোডি উইলসন রেবো এবং ট্রেজারি বোর্ডের সাবেক প্রধান ফিলপটকে এই কেলেংকারির জন্য দলের আইনপ্রণেতা হিসেবে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব থেকেও অব্যাহতি দিয়েছেন। শুধু তাই নয় আগামী অক্টোবরে অনুষ্ঠিতব্য দেশটির সাধারণ নির্বাচনে এ দুজনের প্রার্থিতা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সংবাদ মাধ্যমে এসএনসি লাভালিন সংক্রান্ত ট্রুডোর দেয়া এই বক্তব্যে পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির বিষয়ে বাংলাদেশের সঠিক অবস্থানের বিষয়টি আবারও বিশ্ববাসীর সামনে নতুন করে উঠে এসেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন ট্রুডোর এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণিত হলো দেশের একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক মহল সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে পরিকল্পিতভাবে তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে বিতর্কিত করার জন্য টার্গেট নিয়ে মাঠে নেমেছিল। তারা বলছেন জাষ্টিন ট্রুডো দেরিতে হলেও নতুন করে ধ্রুব সত্যকেই প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

এ মাসের শুরুর দিকে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম রয়টার্সে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, কানাডীয় প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, লিবিয়াতে প্রকল্প পেতে দেশটির ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মুয়াম্মর গাদ্দাফির ছেলে সাদি গাদ্দাফিকে তারা অনৈতিকভাবে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। বিদেশিদের ঘুষ দিয়ে প্রকল্প পাওয়ার এমন চেষ্টা কানাডার আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ। প্রায় সাত বছর ধরে কানাডার পুলিশ এসএনসি-লাভালিনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত করছে। এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি। এ মাসের শুরুর দিকে কমন্সের জাস্টিস কমিটি এ সংক্রান্ত শুনানি সমাপ্ত ঘোষণা করেছে। কিন্তু জোডি উইলসন-রেবোল্ড আবারও শুনানির দাবি জানিয়ে নতুন নথি উপস্থাপন করেছেন।

একই প্রতিবেদনে রয়েছে হাউস অব কমন্সের সংশ্লিষ্ট কমিটির কাছে জমা দেয়া ফোনকলের ১৮ মিনিটের রেকর্ডিংটিতে রয়েছে ট্রুডো সরকারের সাবেক আইনমন্ত্রী জোডিউইলসন-রেবোল্ড এবং প্রিভি কাউন্সিলের কর্মকর্তা মাইকেল ওয়েরনিকের আলাপচারিতা। তারা এসএনসি লাভালিনকে অভিযুক্ত করার বিষয়ে আলোচনা করছিলেন। এ আলোচনায় উঠে আসে, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর ইচ্ছে একটি সমঝোতার মাধ্যমে বিষয়টির ইতি টানা হোক। ট্রুডো এমন অভিযোগের বিষয়ে আগে বলেছিলেন, কুইবেক অঞ্চলের কর্মসংস্থানের স্বার্থে যদি তিনি কোনও ভূমিকা রেখে থাকেন তাহলে তিনি ভুল কিছু করেননি। ফলে এজন্য তিনি ক্ষমা চাইবেন না। এসএনসি লাভালিন ওই অঞ্চলে অনেক বড় কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে। কুইবেকের প্রায় আট হাজার বাসিন্দা এসএনসি-লাভালিনে কাজ করেন।

দুই.
এসএনসি লাভালিনের আর্থিক দুর্নীতি সংক্রান্ত প্রধানমন্ত্রী জাষ্টিন ট্রুডোর এই কঠোর অবস্থান দেশটির আগামী সাধারণ নির্বাচনে তার দলের জন্য বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে পর্যবেক্ষকদের এমন আশঙ্কাকে তিনি মোটেই আমলে নিতে রাজি নন। তার এই কঠোর সিদ্ধান্তে সেদেশের মানুষ প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন জানিয়েছেন। স্বল্পভাষী জাষ্টিন ট্রুডো তার সময়কালে নানা মানবিক ও সত্যবাদিতার জন্য বিশ্বমহলে আলোচিত প্রশংসিত। কানাডা ও জাতিসংঘের বিশেষ সাধারণ অধিবেশনে যোগদানের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জাষ্টিন ট্রুডো দেখা করেছেন। শেখ হাসিনার প্রতি বিশেষভাবে শ্রদ্ধাশীল কানাডার এই তরুণ প্রধানমন্ত্রী সত্যের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)