ভারতের কাছে টেস্ট সিরিজে বিধ্বস্ত। তার উপর শেষ ১৩ ওয়ানডের ১১টিতেই হার। ধারাবাহিক হারের জেরে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার ভাষা ছিল একটাই, ‘জাস্ট ফর আ চেঞ্জ’। কিন্তু ব্রিটিশ মিডিয়ার বক্তব্য ছিল, ভারতীয় দলের কাছে নাকানিচুবানি খাওয়ার পর অ্যালান বোর্ডারের টোটকায় নজর দিচ্ছে অ্যারন ফিঞ্চের দল।
মানে খেলার বাইরের ব্যাপারে নজর দেয়া। ওয়ানডের জার্সিটাই বদলে ফেলেছে অস্ট্রেলিয়া দল। তারা ৩৩ বছর আগে বোর্ডারের দলের রেট্রো হলুদ-সবুজ জার্সিতে ফিরেছে। যে জার্সিতে খেলে তারা ভারতকে ১৯৮৬তে ত্রিদেশীয় সিরিজে (অপর দেশ নিউজিল্যান্ড) হারিয়েছিল। বোর্ডারের দলের জার্সি-মাহাত্ম্য কতটা কি করতে পারে, ম্যাচের আগে সেটাই ছিল আলোচনার।
সেই পরীক্ষার প্রথম দফায় অবশ্য সফল অস্ট্রেলিয়া। ব্যাটসম্যানদের পর দুই তরুণ বোলারের দাপটে প্রথম ওয়ানডেতে সফরকারী ভারতকে ৩৪ রানের হারিয়েছে স্বাগতিকরা। অভিষিক্ত পেসার জেসন বেহরেনডোর্ফ ও জাই রিচার্ডসনের গতির সামনে দাঁড়াতেই পারেননি ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা।
এতে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ১-০তে এগিয়ে গেল ফিঞ্চ বাহিনী। দুদলের পরের ম্যাচ হবে ১৫ জানুয়ারি, অ্যাডিলেডে।
সিডনির উইকেট বিচারে ২৮৯ রানের টার্গেটে ভারতের শুরুটা হয় দুঃস্বপ্নের মতো। স্কোর বোর্ডে ৪ রান জমা হতেই নেই তিন উইকেট। সেটিও আবার অধিনায়ক বিরাট কোহলিসহ।
বেহরেনডোর্ফের ১৪০ গতির বল ব্যাটে লাগাতে ব্যর্থ হন শেখর ধাওয়ান। ফলস্বরূপ খাতা খোলার আগেই এলবিডব্লিউ। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে জোড়া আঘাত হানেন রিচার্ডসন। তিন রান করা কোহলি ফেরেন স্টোয়নিসকে ক্যাচ দিয়ে। এক বল পর এলবিডব্লিউর শিকার আম্বাতি রাইডু (০)।
অজি বোলারদের গতিঝড়ের বিপরীতে উজানে বৈঠা চালান রোহিত শর্মা ও মহেন্দ্র সিং ধোনি। প্রথমদিকে স্বভাববিরুদ্ধ ব্যাটিংই করেন দুজন। পরে আস্তে আস্তে খোলস ছাড়েন। এদিন অবশ্য এক রান করতেই নতুন এক মাইলফলক স্পর্শ করেন ধোনি। ক্যারিয়ারে ৩৩৩তম ওয়ানডেতে ১০ হাজার রান পূর্ণ করলেন ‘মিস্টার কুল’। কিন্তু ৯৬ বলে ৫১ রান করার পর বেহরেনডোর্ফের স্লো ডেলিভারিতে বোকা বনে যান তিনি। ফেরেন এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে।
ক্যারিয়ারের ২২তম সেঞ্চুরি করে এদিন সৌরভ গাঙ্গুলিকে স্পর্শ করেছেন রোহিত শর্মা। কিন্তু দিনশেষে তার এই সেঞ্চুরি ব্যক্তিগত রেকর্ডকে ভারী করলেও দলের জয় আনতে পারেননি। ধোনি ছাড়া অবশ্য অন্যকারো সহযোগিতা পাননি রোহিত। তাকে একপাশে দাঁড় করিয়ে রেখে ফিরে যান দিনেশ কার্তিক (১২) ও রবীন্দ্র জাদেজা (৮)।
পরে বাতাসে ভাসিয়ে খেলতে গিয়ে রিচার্ডসনের বলে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের হাতে ধরা পড়েন রোহিত। ফেরার আগে ১২৯ বলে করেন ১৩৩ রান। তার ইনিংস সাজানো ১০ চার ও ছয়টি বিশাল ছক্কায়।
শেষদিকে ভুবনেশ্বর কুমারের অপরাজিত ২৯ রানের ইনিংস শুধু হারের ব্যবধানই কমিয়েছে। নির্ধারিত ওভারে ৯ উইকেটে ২৫৪ রানে থামে ভারতের ইনিংস। অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ জেতে ৩৪ রানে।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ২৬ রানে ৪ উইকেট নিয়ে সফল বোলার রিচার্ডসন। দুটি করে উইকেট নেন গ্লেন ম্যাকগ্রার হাত থেকে অভিষেক ক্যাপ নেয়া বেহরেনডোর্ফ ও মার্কাস স্টোয়নিস।
এর আগে দলীয় ৮ রানে অ্যারন ফিঞ্চকে ক্লিন বোল্ড করে অস্টেলিয়া ইনিংসে প্রাথমিক ধাক্কাটা দেন ভুবনেশ্বর কুমার। টেস্ট সিরিজের খারাপ ফর্ম ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচেও অব্যাহত অজি অধিনায়কের। ভুবির ডেলিভারিতে পরাস্ত হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন মাত্র ৬ রানে।
এরপর ব্যক্তিগত ২৪ এবং দলীয় ৪১ রানে কুলদীপ যাদবের শিকার হন প্রথমবার ওপেন করতে নামা উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান অ্যালেক্স ক্যারি। তবে প্রাথমিক ধাক্কা সামলে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে লড়াইয়ের জন্য ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের ২৮৯ রানের বিরাট লক্ষ্যমাত্রা দেয় অজিরা।
অধিনায়ক ফিঞ্চ ও ক্যারি দ্রুত ফিরে যাওয়ার পর অজি ইনিংসের হাল ধরেন উসমান খাজা এবং শন মার্শ। তৃতীয় উইকেটে এই দুই বাঁহাতির ৯২ রানের পার্টনারশিপ দারুণভাবে লড়াইয়ে ফিরিয়ে আনে অস্ট্রেলিয়াকে। অর্ধশতরান করেন দুজনই।
পরে পিটার হ্যান্ডসকম্বের ঝকঝকে ৭৩ এবং শেষদিকে মার্কাস স্টোয়নিসের ঝোড়ো ব্যাটিং স্বাগতিকদের পৌঁছে দেয় চ্যালেঞ্জিং স্কোরে।
ভারতের হয়ে দুটি করে উইকেট নেন ভুবনেশ্বর এবং কুলদীপ। রবীন্দ্র জাদেজার ঝুলিতে যায় একটি উইকেট।