করোনা ধকল কাটিয়ে এই ঈদে আবার চাঙা হয়েছে সিনেমা অঙ্গন। দর্শকদের সিনেমা হলে ফেরানোর ‘অসাধ্য সাধন’ করেছে ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলো। এরমধ্যে শাকিব খান অভিনীত ‘গলুই’ ও ‘বিদ্রোহী’ সিনেমা দুটি দেখতে গ্রাম গঞ্জের মানুষ হল মুখী হওয়ার খবর দেখা যাচ্ছে।
তবে এরমধ্যেই ঘটলো বিপত্তি। বিশেষ করে শাকিব অভিনীত ‘গলুই’ সিনেমাটির যখন জয়জয়কার, ঠিক তখনই আইন দেখিয়ে জামালপুরে জেলা প্রশাসন সিনেমাটির প্রদর্শন বন্ধের নির্দেশ দেয়। এমন নির্দেশনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শাকিব ভক্তরা।
গলুই পরিচালনা করেন এস এ হক অলিক। সিনেমাটির বেশীরভাগ শুটিং হয়েছিল জামালপুরে। তবে এই জেলায় কোনো সিনেমা হল না থাকায় বাধ্য হয়ে স্থানীয়দের চাহিদার কথা বিবেচনা করে শিল্পকলার অডিটরিয়ামে প্রদর্শন করা হচ্ছিল গলুই। মুক্তির প্রথম সপ্তাহে ব্যাপক সফলতাও পায় ছবিটি। দূরদূরান্ত থেকে গলুই দেখতে জামালপুর ছুটে যায় দর্শক। দেদারসে চলছিল ছবিটি, আর তখনই এলো প্রদর্শনী বন্ধের নির্দেশনা।
এস এ হক অলিক চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, জেলা প্রশাসক ১৯১৮ সালের ব্রিটিশ আইন দেখিয়ে প্রদর্শনী বন্ধ করে দিয়েছেন। জেলা প্রশাসন বলছেন, সরকারি জায়গায় বাণিজ্যিকভাবে সিনেমা চালানো যায় না। কিন্তু এমন নিয়মে সিনেমার ক্ষতি হবে, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব। তাছাড়া ‘গলুই’ নির্মাণে সরকার অনুদান দিয়েছে।
তিনি বলেন, দর্শকদের হলমুখী করছিল ‘গলুই’। মধ্যবিত্তসহ সব শ্রেণির দর্শক দেখছিলেন। আমরা আশাবাদী হচ্ছিলাম। এমন সময় প্রদর্শনী বন্ধ হয়ে যাওয়া আমাদের জন্য দুঃসংবাদ। তথ্য মন্ত্রী মহোদয়কে বিষয়টি অবগত করেছি। আশা করছি আবার জামালপুরে ছবি চালাতে পারবো।
‘গলুই’ সিনেমার প্রদর্শনী নিয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বিকেল থেকে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে ‘গলুই’ এর প্রদর্শনী বন্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা। কিংবদন্তী চিত্রপরিচালক কাজী হায়াত চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, খবর নিয়েছি জামালপুরে খুব ভালো চলছে গলুই। মানুষ যেহেতু আনন্দের সঙ্গে গলুই দেখছে তাই বন্ধ করে দেয়া উচিত হয়নি। ১৯১৮ সালের আইনে যদি গলুই এর প্রদর্শনী বন্ধ করা হয়, তাহলে সেই সময়ের আইনে কি বলা আছে এখন যে মোবাইলে ছবি দেখা যাচ্ছে সেই বিষয়টি? আমি পরিষ্কারভাবে বলছি এটি উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও ঈর্ষা কাতর হয়ে করা হয়েছে। সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি, প্রয়োজনে এই আইন সংশোধন করুন, ভালো সিনেমা প্রদর্শনে সহায়তা করুন।
‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবির পরিচালক দীপঙ্কর দীপন ফেসবুক প্রতিবাদ জানিয়ে লিখেছেন, জেলা শহরের সাংস্কৃতিক বিরোধ নিয়ে আমার ধারণা আছে। আমি আশা করি, ডিসির সিদ্ধান্তের পেছনে এমন কিছু নেই। থাকলেও সংস্কৃতির বিচারেই তার এই আচরণের প্রতিবাদ করি। আর এটা সম্পূর্ণ তার একক সিদ্ধান্ত হলেও অবাক হব না, এ নজিরও আমি দেখেছি। প্রতিবাদ প্রয়োজন। বিকল্প স্ক্রিনিং এ মুহূর্তে খুব দরকার।’ এ ছাড়া গিয়াস উদ্দিন সেলিম, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, খিজির হায়াত খান, অঞ্জন আইচ, অপূর্ব রানাসহ একাধিক চলচ্চিত্র পরিচালক ও কলাকুশলী সিনেমাটি বন্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন নির্মাতা মোস্তফা সরায়ার ফারুকী ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে লেখেন, শিল্পীর স্বাধীনতা বিষয়ে আপনি মনে মনে অনেক কিছু প্রত্যাশা করতে পারেন। বাস্তবে আপনার হাত পা পুরাই বাঁধা! এই বিষয়ে সরকারের সাথে আমরা আমাদের নেগোসিয়েশন যথাযথ করতে পারি নাই। কেনো পারি নাই এটা সবাই নিজেদের প্রশ্ন করলে উত্তর পাইয়া যাবেন।
এক সময়কার জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও সেন্সর বোর্ডের সদস্য অঞ্জনা রহমান লিখেছেন, আমাদের চলচ্চিত্র শিল্প রক্ষায় শিল্পী পরিবারের সবাইকে এক হওয়া উচিত। গলুই চলচ্চিত্র দিয়ে আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রে সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। ১০৩ বছর আগের আইনের সামান্য একটি নজীর দেখিয়ে সিনেমা প্রদর্শনী বন্ধ করা অবশ্যই অপরাধ, যাদের মধ্যে চলচ্চিত্র শিল্প সত্তা বিদ্যমান, যারা বাংলা চলচ্চিত্রকে মনেপ্রাণে লালন করেন, তাদের সবাইকে এর তীব্র প্রতিবাদ করা উচিত।