জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পে অপরিকল্পনা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিন দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে আগামীকাল (বুধবার) বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দ্বিতীয় দফায় আলোচনায় বসার কথা রয়েছে।
তবে শাখা ছাত্রলীগের এক নেতার সাথে সদ্য সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর ফোনালাপ ফাঁস এবং টাকা পাওয়ার বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতার বক্তব্যের পর পূর্ব নির্ধারিত আলোচনা হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হলে হল নির্মাণের জায়গা ও মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে শুরু হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাংশের আন্দোলন। পরে উন্নয়ন প্রকল্প থেকে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে দুই কোটি টাকা দিয়েছে এমন অভিযোগ ওঠার পর ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যনারে ক্যাম্পাসে আন্দোলন শুরু হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বরাবরই বলা হয়েছে এটি বানোয়াট ও ভিত্তিহীন কথা। আন্দোলনকারী ও প্রশাসনের কয়েক দফা আলোচনা শেষে গত বৃহস্পতিবার আন্দোলনকারীদের তিন দফা দাবির মধ্যে দু’টি মেনে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আন্দোলনকারীদের অপর একটি দাবি ‘দুর্নীতির অভিযোগের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি’ গঠনের বিষয়ে আইনি পরামর্শের জন্য তিন কার্যদিবস সময় নেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম। সেই অনুযায়ী বুধবার সন্ধ্যায় দু’পক্ষের পূর্বনির্ধারিত আলোচনায় বসার কথা রয়েছে।
তবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উন্নয়ন প্রকল্প থেকে ৪-৬ % দাবি করে- উপাচার্যের বরাত দিয়ে এমন সংবাদ প্রকাশ এবং ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সাথে শাখা ছাত্রলীগের নেতা হামজা রহমান অন্তর ও সাদ্দাম হোসাইনের উন্নয়ন প্রকল্পের টাকার ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে একটি ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে শুরু হয় আলোচনা- সমালোচনা।
এরই মধ্যে ২৫ লাখ টাকার ভাগ পেয়েছেন বলে সোমবার গণমাধ্যমকে জানান জাবি শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন ও সহ-সভাপতি নিয়ামুল হাসান তাজ। তবে এ টাকা উন্নয়ন প্রকল্প থেকে দেওয়া হয়েছে না অন্য কোথাও থেকে দেওয়া হয়েছে তা তারা জানেন না বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছন। নিয়ামুল হাসান তাজ জানান, ঈদ সেলামি হিসাবে উপাচার্যের কাছ থেকে ছাত্রলীগে তার গ্রুপ ২৫ লাখ টাকা পেয়েছে।
অপরদিকে টাকা পাওয়ার কথা অস্বীকার করে একে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র হিসেবে অভিহিত করেছেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়ের রানা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে টাকা ভাগ-বাটোয়ারার অভিযোগকে অস্বীকার করে একে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং পূর্ব পরিকল্পিত বলা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টর ফিরোজ উল হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের কথা বলছেন। তাদের বক্তব্য থেকে স্পষ্টত বোঝা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রশাসনের সুনাম ক্ষুণ্ন করতে এমন বক্তব্য রাখছেন।
বুধবারের পূর্ব নির্ধারিত আলোচনা সম্পর্কে প্রক্টর ফিরোজ উল হাসান বলেন, আলোচনা অবশ্যই হবে, আলোচনার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। আশা করছি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে একটি ভালো সমাধান বের হবে।
‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ প্ল্যাটফর্মের অন্যতম সমন্বয়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আশিকুর রহমান জানান, আমাদের দাবি সুনির্দিষ্ট। এখানে যে কিছু একটা হয়েছে এটা এখন পানির মতো পরিষ্কার। আমরা বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছি এবং সে দাবির ওপরই আছি। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রশাসনের সাথে আমরা আলোচনায় বসবো কিনা এ ব্যাপারে আমাদের আরও একটু ভাবতে হবে।