জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের পক্ষ বিপক্ষের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করছেন।
বুধবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে আন্দোলনকারীরা। অপরদিকে আন্দোলনকে ষড়যন্ত্র উল্লেখ করে তার প্রতিবাদে পাল্টা কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে উপাচার্যপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ’।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনের প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে উপাচার্যপন্থী শিক্ষকরা। সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ’ ব্যানারে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। এসময় উপাচার্যের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগকারীদের চিহ্নিত করে দুর্নীতিবাজদের শাস্তির দাবি জানানো হয়। মানববন্ধনে বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষক অংশগ্রহণ করেন।
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যবিরোধী চলমান আন্দোলনকে ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার। তিনি বলেন, ‘আন্দোলন আর চক্রান্ত দুইটা দুই জিনিস। আমি মনে করি আন্দোলন হলে আলোচনাও হবে। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হবে। আলোচনায় না গিয়ে আন্দোলন করলে তা চক্রান্তই বলা যায়।’
বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের দাবির প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠণের জন্য উপাচার্য আলোচনায় বসলেও তারা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করে। এতেই প্রমাণিত হয় এই আন্দোলনের পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে। ষড়যন্ত্রমূলক কোনো অযৌক্তিক আন্দোলনের কাছে আমরা মাথা নত করব না।’
বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক বশির আহমেদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কর্মকান্ড বাঁধাগ্রস্ত করতে একটি মহল অযৌক্তিক আন্দোলন করছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো অযৌক্তিক আন্দোলন সফল হবে না।’ এসময় আন্দোলনকারীরা অচিরেই তাদের ভুল বুঝতে পেরে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এদিকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে দুই দিনের ধর্মঘট ও প্রশাসনিক ভবন অবরোধের ডাক দিয়েছে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে আন্দোলনকারীরা। বুধবার ভোর ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন ডিপো অবরোধের মাধ্যমে ধর্মঘট কর্মসূচি শুরু করে আন্দোলনকারীরা। এসময় পরিবহন ডিপো থেকে ঢাকাগামী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কোন যানবাহন বের হতে দেওয়া হয় নি।
পরবর্তী সময়ে সকাল সাড়ে ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ও পুরাতন প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করেন। ধর্মঘটের কারণে অধিকাংশ বিভাগে বন্ধ রয়েছে ক্লাস-পরীক্ষা। অবরোধের কারণে অফিস কক্ষে প্রবেশ করতে পারেনি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ফলে প্রশাসনিক কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে।
আন্দোলকরীরা জানান, পুর্ব নির্ধারিত কোন পরীক্ষা ব্যতীত সকল প্রকার ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। নতুন করে কোন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে দিবে না। পাশাপাশি তারা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করবেন।
আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন উপাচার্যের পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তারা এ আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।