জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে(জাবি) ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন সকল পরীক্ষা কেন্দ্রে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা শুরুর প্রথম দিন গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে প্রত্যেকদিন আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছেন তারা। আন্দোলনকারীদের দাবি, দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তিতে আগামী ০১ অক্টোবরের মধ্যে উপাচার্যকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে হবে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়কসমূহ প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
মিছিল শেষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দেন উপাচার্য ও দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনরত শিক্ষকগণ।
প্রতিবাদ সমাবেশে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারের মুখপাত্র অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ‘আমরা উপাচার্যকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছি। এর মধ্যে পদত্যাগ না করলে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে তার পতন ঘটানো হবে।’
এ সময় তিনি ধারাবাহিক আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা করেন। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আগামী রোববার দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতিবাদী গানের আয়োজন ও ‘অবাঞ্ছিত’ উপাচার্যকে কালো পতাকা প্রদর্শন।
পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক খবির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা বর্তমান উপাচার্যকে পহেলা অক্টোবরের মধ্যে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছি। এর মধ্যে পদত্যাগ না করলে ঘোষিত সময়ের পর আমরা তাকে যেখানে পাব সেখানেই প্রতিরোধ করব। দুর্নীতিবাজ উপাচার্যের শুধু পদত্যাগ নয় পাশাপাশি সঙ্গে আরও যারা জড়িত তাদের সকলকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সদস্য রাকিবুল রনি বলেন, ‘জনগণের ট্যাক্সের টাকা থেকে দুই কোটি টাকা দুর্নীতিবাজ ভিসি ছাত্রলীগের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে আগে কেউ এমনটা দেখে নাই যে সরকার দলীয় ছাত্র নেতাদের মধ্যে জনগণের টাকা দিয়ে দেয়। আমরা ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে স্বাভাবিক আন্দোলন পরিচালনা করছি। আল্টিমেটামের সময়ের মধ্যে পদত্যাগ না করলে সমগ্র জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ফারজানা ইসলামকে চিরতরের জন্য বয়কট করবে।’
উপাচার্যকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের জাবি শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক আদিব আরিফ বলেন, ‘দুর্নীতিবাজ উপাচার্য গত দুইমাসে যে ধরনের মিথ্যাচার করেছেন এবং তথ্য গোপন করেছেন তাতে আর কোনোভাবেই তিনি উপাচার্য পদে থাকতে পারেন না।’
জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম পাপ্পু বলেন, ‘উপাচার্য আপনার জন্য অপশন দুইটা- এক. নিজে পদত্যাগ করুন অথবা জাহাঙ্গীরনগরের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা আপনাকে টেনে হিঁচড়ে পদ থেকে নামাতে বাধ্য হবে। আপনার সৎ সাহস থাকলে অবাঞ্ছিত অবস্থায় চোরের মতো কেন্দ্র পরিদর্শনে যেতেন না। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের ওপর দায়বদ্ধতা থেকে আমরা কোনো কঠোর আন্দোলনের দিকে যাচ্ছি না। তবে এটাকে আমাদের কোনো দুর্বলতা ভাবার কারণ নেই। আগামী পহেলা অক্টোবরের মধ্যে পদত্যাগ না করলে আমাদের কঠোর রূপ দেখবেন।’
বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অন্যান্যের মধ্যে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক কামরুল আহসান, অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ, অধ্যাপক জাকির হোসেন, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল জব্বার হাওলাদার, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন রুনু, অধ্যাপক তারেক রেজা, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক নূরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।