কিছুদিন আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ছিনতাইয়ে বাধা দেয়ায় সেখানে কর্মরত চ্যানেল আই প্রতিনিধি মাহমুদুল হক সোহাগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এক ছাত্রীর ওপর হামলা করা সেই তিন শিক্ষার্থীকে আবারো ছিনতাইয়ের অভিযোগে আটক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
রোববার দুপুর ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকা থেকে ছিনতাইয়ের সময় ওই তিনজনসহ মোট পাঁচ শিক্ষার্থীকে হাতেনাতে আটক করা হয়।
পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানালে তাদেরকে আটক করে প্রক্টর অফিসে নিয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেখানে ছিনতাইয়ে জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হয়।
জানা যায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাপ্তাহিক কোর্স আইবিএ- এর শিক্ষার্থী জাহেদুর রহমান অর্ণব ও তার বান্ধবী রোকইয়া হামিদ সেতু দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে যায়। দুপুর দেড়টার দিকে বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় ঘুরতে গেলে সেখানে তারা মারধর ও ছিনতাইয়ের শিকার হন। ঘটনার শিকার জাহেদুর রহমান বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
আটককৃতরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ছাত্র মো. সোহেল রানা, মো. মোস্তাফিজুর রহমান, ইয়া-রাফিউ-শিকদার, বাংলা বিভাগের মো. সজিব কাজী ও আসিফ আহমেদ। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম আবর্তন ও শহীদ রফিক জব্বার হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
এর আগে ওই তিনজনের বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের ঘটনায় বাধা দেয়ায় এক সাংবাদিক ও ছাত্রীকে মারধরের অভিযোগ থাকলেও তাদের বহিষ্কার নিয়ে গড়িমসি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত ৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটে অভিযুক্ত চার শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কারের সুপারিশ করা হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন প্রকার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে বিচারহীনতা সংস্কৃতি চালু হওয়ায় বারবার এমন ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
তারা সবাই নিজেদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানার অনুসারী বলে দাবি করেন জানা গেছে।
অন্যদিকে সাংবাদিক মাহমুদুল হক সোহাগ ও তার বান্ধবীকে মারধরের ঘটনায় চারজনকে সাময়িক বহিস্কার করলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানার চাপে তাদের বহিষ্কারাদেশ স্থগিত করে বলে জানায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
তবে আটককৃতরা ছাত্রলীগের কেউ না জানিয়ে জুয়েল রানা বলেন, “ছিনতাইয়ের সময় আমি নিজে তাদেরকে ধরে প্রক্টরিয়াল বডির হাতে তুলে দিয়েছি। তারা কোনভাবে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলে বহিষ্কারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আর আগের ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি বহিষ্কার স্থগিত করতে চাপ দেইনি। মূল হোতাকে বাদ দিয়ে যাতে বহিষ্কার না করা হয় সে বিষয়ে জোর দিয়েছিলাম।’
অভিযোগপত্র সূত্রে জানা যায়, রোববার দুপুরে অভিযোগকারী ও তার বান্ধবী ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসে। দুপুর দুইটার দিকে তারা বোটানিক্যাল গার্ডেনের দিকে গেলে অভিযুক্ত পাঁচ শিক্ষার্থী দুজনকে আটক করে বোটানিক্যাল গার্ডেনের ভিতরে নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে জাহেদুলের কাছে ২৫ হাজার টাকা দাবি করে তারা।
জাহেদুল টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে বেধড়ক মারধর করতে থাকে। এরপর জাহেদুলের বান্ধবীর কানের দুল ও মানিব্যাগ থেকে নগদ কিছু টাকা ছিনিয়ে নেয়।
এবিষয়ে সোমবার জরুরি ডিসিপ্লিনারি বোর্ডের সভা আহ্বান করা হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সিকদার মো. জুলকারনাইন জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “আটককৃতরা ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলো বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। তাদেরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তারা নোটিশের জবাবও দিয়েছে। তদন্তের প্রাথমিক প্রতিবেদন তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। আগামীকাল ডিসিপ্লিনারি বোর্ডের জরুরি সভা আহ্বান করা হয়েছে। বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।