জাবি প্রতিনিধি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) সিনিয়র শিক্ষার্থীদের র্যাগিংয়ের শিকার হয়ে প্রথম বর্ষের এক নবীন শিক্ষার্থীর মানসিক ভারসাম্য হারানোর ঘটনায় জড়িতদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিচারের দাবি জানিয়েছে প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ ও নির্বাচিত সিনেটরবৃন্দ।
সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের(পুরাতন) সামনে আয়োজিত এক অবস্থান কর্মসূচি পালনের সময় বক্তারা এ দাবি জানান।
বেলা সাড়ে ১০ টার দিকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন নির্বাচিত সিনেটরবৃন্দ। একই দাবিতে পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’। পরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে র্যাগিং বন্ধ ও অবিলম্বে উপাচার্য নির্বাচনের তারিখ ঘোষণাসহ বিভিন্ন দাবিতে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি জমা দেন তারা।
অবস্থান কর্মসূচি বিশ্বদ্যিালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবারও র্যাগিংয় নামক এক জঘন্য ঘটনার শিকার হয়েছে প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী। তিন-চার দিন অতিবাহিত গেলেও এখনো কোন এ র্যাগিংয়ের বিচারের কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। কোন জায়গার ইতিহাসে আছে র্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটার পর বিভাগ তদন্ত করে। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিসের জন্য? বিভাগের তদন্তের নামে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে এসব বিচার কার্যক্রমে। আমরা সিনেট সদস্যরা বলছি আপনার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এ র্যাগিংয়ের বিচার করতে হবে। আজকের এই অবস্থান কর্মসূচি থেকে আমরা দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলতে চাই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এই ঘটনায় জড়িতদের বিচার বাস্তবায়ন করে আমাদের জানাতে হবে।’
এসময় তিনি আসন্ন উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের তারিখ দ্রুত ঘোষণার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘মাননীয় উচাপার্য আপনি দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসেন, কিন্তু গণতান্ত্রিক ভাবে। কোন অগণতান্ত্রিক উপাচার্যকে আমরা মেনে নেবো না। আপনি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেছিলেন যে, রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচনের পরপরই উপাচার্য নির্বাচন হবে। আজ ক্ষমতার লোভে সেই প্রতিশ্রুতি থেকে সরে এসেছেন। এটি শুভ কোন লক্ষ্মণ নয়। আমরা অবিলম্বে উপাচার্য নির্বাচন এবং ক্যাম্পাসে বিরাজমান অরাজক পরিস্থিতির দ্রুত অবসান চাই। প্যানেল নির্বাচন দিয়ে প্যানেলের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পন্থায় নির্বাচিত হোন প্রয়োজনে আপনাকে আমরা সকল প্রকার সমর্থন ও সহযোগিতা দেবো।
গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদের ডিন ড. অজিত কুমার মজুমদার বলেন, ‘দীর্ঘ ১৯ বছর যাবৎ বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনেট নির্বাচনের বিভিন্ন জট তৈরি হয়েছিলো। ইতোমধ্যে গণতান্ত্রিক পন্থায় সিনেট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ জটের সাথে সকল প্রকার জোটই দূর হবে আশা করি। উপাচার্য নির্বাচনের মাধ্যমেও বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে যেনো অব্যহত রাখা হয়। ’
উল্লেখ্য যে, গত বৃহস্পতিবার মো. মিজানুর রাহমান নামে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রথম বর্ষের এক ছাত্র র্যাগিংয়ের শিকার হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। এ ঘটনা শুনে শুক্রবার রাতে আত্মীয় স্বজন-জনসহ তার বাবা দেখা করতে এলে তাদের কাউকেই চিনতে পারেননি ওই শিক্ষার্থী। পরে র্যাগিংয়ের এ ঘটনা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়।