জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়(জাবি) ক্যাম্পাসে নির্বিচারে হাজারের অধিক গাছ কেটে অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ঐক্যমঞ্চ’ ব্যানারে টারজান পয়েন্ট থেকে মিছিলটি শুরু হয়। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও অনুষদ ভবন প্রদক্ষিণ করে উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ার উল্লাহ ভূইঞা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উন্নয়নের নামে পরিকল্পনাবিহীন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। গতকাল সিনেট ভবনে মহাপরিকল্পনার নামে মনগড়া অসম্পূর্ণ একটি নকশা দেখানো হয়েছে। যেখানে শুধু কতগুলো বিল্ডিংয়ের নকশা দেখানো হয়েছে তবে অবস্থান স্পষ্ট করা হয়নি।’
এসময় উপাচার্য সেখানে ডেকে নিয়ে কতিপয় ছাত্রদের ও তার অনুগত শিক্ষকদের দ্বারা উপস্থিত সকলকে অসম্মান করেছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
অধ্যাপক শামীমা সুলতানা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় তড়িঘড়ি করে একনেকে পাশ করানোর জন্য একটি পরিকল্পনা করে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির সম্মুখীন হবে ও ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হুমকিতে পড়বে।’
বাংলা বিভাগের এ অধ্যাপক বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের কথা বিবেচনায় নিয়ে যথোপযুক্ত পরিকল্পনার আহ্বান জানান।
শিক্ষার্থীদের পক্ষে সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আশিকুর রহমান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদেরই আলোচনার জন্য ডেকে নিয়ে তাদের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে জানিয়ে দিলেন। আমরা প্রশাসনের এ ধরণের স্বৈরাতান্ত্রিক সিদ্ধান্তের নিন্দা জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘নিম গাছ লাগিয়ে তা থেকে কখনো মিষ্টি আম আশা করা যায় না। ব্যর্থ প্রশাসনকে কার্যকর না করে যত হলই নির্মাণ করা হোক না কেন, আবাসন সংকট সমাধান হবে না।’
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক জয়নাল আবেদিন শিশির বলেন, ‘ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব। সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে যেকোন উন্নয়নে আমরা প্রশাসনকে সহযোগিতা করবো। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে ছাত্রদের মতামত বিবেচনায় সিদ্ধান্ত পুনঃমুল্যায়নের আহ্বান জানাচ্ছি।’
গত ৩০ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প’-এর আওতায় পাঁচটি হল নির্মাণের কাজ উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু পাঁচটি আবাসিক হল নির্মাণে সঠিক পরিকল্পনা না থাকা ও হাজারের অধিক গাছ কেটে ফেলা নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।
গতকাল বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সামনে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের নকশা তুলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এসময় অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ প্রকল্প বিশ্লেষণের জন্য তিন মাস সময় দাবি করেন।