চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

জাহাঙ্গীরনগরে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের মধ্যে হাতাহাতি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রশাসনপন্থী ও প্রশাসন বিরোধী আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের দুই পক্ষের মধ্যে একাধিকবার হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার জেরে দু’ পক্ষ প্রশাসনিক ভবনের সামনে পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়ে কর্মসূচি পালন করছে। সেসময় দু’ পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়।

সাবেক ভিসি শরীফপন্থী শিক্ষকদের দাবি, তারা শান্তিপূর্ণভাবে ভোরে বাস ডিপোতে তালা ঝুলিয়ে দেন। কিন্তু প্রশাসনপন্থী শিক্ষকরা তাদের লাঞ্ছিত করেন বলে তারা ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করছেন। বিকাল ৪টা পর্যন্ত এ ধর্মঘট পালন করার কথা জানান তারা।

অপরদিকে প্রশাসনপন্থী শিক্ষকদের দাবি, আন্দোলনকারী শিক্ষকদের দ্বারা লাঞ্ছিত হয়েছেন বলে বিচারের দাবিতে প্রশাসনিক ভবনের সামনে তারা মানববন্ধন করেছেন।

মঙ্গলবার ভোর পৌণে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশমাইল এলাকায় পরিবহন ডিপোর সামনে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম এবং সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবিরের অনুসারী শিক্ষকদের মধ্যে হাতাহতির ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উপাচার্য ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট-১৯৭৩, স্ট্যাটিউট ও সিন্ডিকেট পরিচালনা বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে ডাকা ধর্মঘটের অংশ হিসেবে ভোর চারটার দিকে শরীফ এনামুল কবিরের অনুসারী ৫ জন শিক্ষক পরিবহন ডিপোর সামনে অবস্থান নিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন।

জানতে পেরে উপাচার্য ফারজানা ইসলামের অনুসারী শিক্ষকরা সেখানে উপস্থিত হয়ে তালা খুলে দিতে বললে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়েন দু’ পক্ষের শিক্ষকরা। এরকম একটি ভিডিও ইউটিউবেও ছড়িয়ে পড়ে।

ঘটনা সম্পর্কে উপাচার্যকে জানাতে আন্দোলনকারী ১৫ জন শিক্ষক উপাচার্যের বাসভবনে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করে প্রভোস্ট নিয়োগসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। সেসময় উপাচার্য শিক্ষকদের বলেন: ‘প্রভোস্টদের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তারা আমাকে প্রশাসনিক কোনো কার্যক্রমে সহযোগিতা না করে প্রশাসনের বিপক্ষে নানা রকম কার্যক্রম পরিচালনা করায় তাদের অব্যাহতি দিয়ে সাময়িকভাবে নতুন প্রভোস্ট নিয়োগ দেয়া হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন: ‘আপনাদের আন্দোলন করার অধিকার যেমন রয়েছে, তেমনি অন্যদের আন্দোলন না করার অধিকারও রয়েছে। তাই বাস আটকে দিয়ে যারা আন্দোলন সমর্থন করেন না তাদের বাধা দেওয়ার অধিকারও আপনাদের নেই।’

পরে শরীফ এনামুল কবিরপন্থী ৫০-৬০ জন শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে ধর্মঘট পালন করেন। আন্দোলনকারী শিক্ষকদের দাবি, তারা শান্তিপূর্ণভাবে ভোরে বাস ডিপোতে তালা ঝুলিয়ে দেন। কিন্তু প্রশাসনপন্থী শিক্ষকরা তাদের লাঞ্ছিত করেছেন।

সকাল সাড়ে ১০টায় উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম প্রশাসনকি ভবনে আসেন। তিনি শিক্ষকদের শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করার অনুরোধ করে ওই জায়গা থেকে চলে যান।

সেসময় উপাচার্যের কাছে শিক্ষক লাঞ্ছনার বিচার দাবি কো হলে উপাচার্য আন্দোলনকারীদের বলেন: ‘আমি উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালনের নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন বলে আপনারা দাবি করেছেন। তাহলে আমি এই ঘটনার তদন্ত কীভাবে করবো।’

ওদিকে, সাড়ে ১১টার দিকে প্রশাসনপন্থী শিক্ষকরা আন্দোলনকারী শিক্ষকদের দ্বারা লাঞ্চিত হয়েছেন বলে অভিযোগ এনে এর বিচার দাবি করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে মানববন্ধন করেন।

বিভক্তি যে কারণে
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি উপাচার্য হিসেবে ফারজানা ইসলাম পুনঃনিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের মধ্যে বিভাজন স্পষ্ট হতে থাকে।

শিক্ষকরা সাবেক উপাচার্য শরীফ এনামুল কবির ও বর্তমান উপাচার্য ফারজানা ইসলাম এই দুই মেরুতে বিভক্ত হয়ে পড়েন।

শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে ফারজানা ইসলামের পক্ষ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পর দুটি অনুষদের ডিন পদে ও প্রক্টরিয়াল বডিতে পরিবর্তন আনা হয়। এরপর গত ১১ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়টি আবাসিক হলে প্রভোস্ট পদেও পরিবর্তন আনেন উপাচার্য ফারজানা ইসলাম।

এক অফিস আদেশে নয় জন প্রভোস্টকে অব্যহতির ঘটনাকে নজিরবিহীন, অ্যাক্টবিরোধী ও শিষ্টাচার বহির্ভূত উল্লেখ করে মঙ্গলবার ধর্মঘটের ডাক দেন শরীফ এনামুল কবিরের অনুসারী আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা।