চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

জাতীয় সঙ্গীতও বাজে না সিলেটের সেই স্কুলে

নিয়মিত জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয় না সিলেটের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্কলার্সহোমে। শিক্ষার্থীদের শরীরচর্চাও (এ্যাসেম্বলি) হয় না নিয়মিত। ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে গিয়ে দেখা যায়- জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়নি। যদিও সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, প্রতিদিন জাতীয় সঙ্গীত ও এ্যাসেম্বলির আয়োজন করা বাধ্যতামূলক। স্কলার্সহোমের এই নির্দেশনা অমান্য করাকে রাষ্ট্রদোহিতার সামিল বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্টজনেরা।

বিষয়টি নিয়ে বুধবার প্রতিবেদন প্রকাশ করে সিলেট টুডে টোয়েন্টিফোরডটকম।

মঙ্গলবার সিলেটের স্কলার্সহোম স্কুল এন্ড কলেজের ‘বোমা সদৃশ্য বস্তু’ উদ্ধারের খবর পেয়ে সাংবাদিকরা সেখানে ভিড় করলে অভিভাবকরা অভিযোগ করেন, স্কলার্সহোমে নিয়িমত জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ানো হয় না। শিক্ষার্থীদের শরীর চর্চার আয়োজনও হয় না নিয়মিত।

অভিভাবকদের এসব অভিযোগের প্রেক্ষিত বুধবার প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) জুবায়ের সিদ্দিকীর দৃষ্টি আকর্ষন করলে তিনি উত্তর না দিয়ে সাংবাদিকদের সাথে অশোভন আচরণ করেন।

এর আগে মঙ্গলবার জাতীয় পতাকা উত্তোলন না করা সম্পর্কে জুবায়ের সিদ্দিকী বলেছিলেন, আইনে আছে বৃষ্টি আসলে জাতীয় পতাকা নামিয়ে ফেলতে হবে। কারণ জাতীয় পতাকা ভিজলে অসম্মান হয়। তাই মঙ্গলবার বৃষ্টি থাকায় জাতীয় পতাকা নামিয়ে ফেলা হয়েছে।

তবে জাতীয় পতাকা বিধিমালা-১৯৭২ (সংশোধিত ২০১০) তে অধ্যক্ষের কথার সত্যতা পাওয়া যায়নি। এই বিধিমালার কোথাও বৃষ্টি সংক্রান্ত বিষয়ের উল্লেখ দেখা যায়নি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কড়া নির্দেশনা থাকার পরও কেন তা পালন করা হয় না এমন প্রশ্নের উত্তরে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন সিলেট শিক্ষা বোর্ড ও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বেসরকারি এসব প্রতিষ্ঠানে প্রভাবশালীরা জড়িত। তাই কোন অনিয়ম ও অভিযোগ নিয়ে তদন্তে নামলেও তা আলোর মুখ দেখে না।

জানা যায়, গত মঙ্গলবার নগরীর শাহী ঈদগাহ এলাকায় স্কলার্স হোম স্কুল এন্ড কলেজের ক্যাম্পাসে বোমাসদৃশ বস্তু রয়েছে- এমন খবরের ভিত্তিতে অভিযানে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বুধবার এর সত্যতা পায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এর পর থেকেই এ প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে নানা অনিয়মের চিত্র উঠে আসে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও জাতীয় পতাকা উত্তোলন, শপথ গ্রহণ ও প্রাত্যহিক সমাবেশের নিয়মগুলো এ প্রতিষ্ঠানটি তা মানছে না। এতে করে শিক্ষার্থীদের মানবিক মূল্যবোধ ও দেশপ্রেমের চেতনাবোধের পথে বাঁধা সৃষ্টি করছে বলে মনে করছেন সুশীল সমাজ।

এ ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ বলেন, এ ধরনের কর্মকান্ডের সাথে স্বাধীনতা বিরোধী চক্র জড়িত। এরা সরকারের ভেতর ঘাপটি মেরে রয়েছে। এরা এ দেশের স্বাধীনতা চর্চাকে বিনষ্ট করতে চায়। সরকারের উচিত এদের শাস্তি নিশ্চিত করে শহীদদের লালিত স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করা।

প্রবীণ রাজনীতিবিদ লোকমান আহমেদ বলেন, এ ধরণের কর্মকান্ডে যারা জড়িত তাদের ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে। তাদের আদর্শিক অবস্থানও ভিন্ন। তারা কোমলতি শিশু কিশোরদের বিপথগামী পথে ঠেলে দিতে চায়। এদের সেই কুন্ঠাবোধ সমূলে বিনষ্ট করে দিতে হবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সিলেট অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর কবির আহমদ বলেন, আগামী প্রজন্মকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হলে, প্রাত্যহিক সমাবেশের ব্যবস্থা করা, জাতীয় পতাকার মর্যাদা সমুন্নত রাখা, শিক্ষার্থীদের দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্বের চেতনায় উদ্ধুদ্ধ করার নির্দেশনা রয়েছে।

তিনি বলেন, জাতীয় সংগীত ও জাতীয় পতাকা অবমাননা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। এ ব্যাপারে কোন অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, জাতীয় সঙ্গীত না গাওয়া এবং এসেম্বলি ও শপথ পাঠ করানো হয় না যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশাত্মবোধ সৃষ্টি করা থেকে বিরত রাখতেই উদ্দেশ্য মুলকভাবে যারা এসব করেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

এ ব্যাপারে সিলেট শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক একেএম গোলাম কিবরিয়া তাপাদার বলেন, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ানো ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের নির্দেশনা রয়েছে। এই নির্দেশনা অমান্য করার কোনো সুযোগ নেই।