চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

‘জাতীয় নৌ-নিরাপত্তা দিবস’ ঘোষণার দাবিতে মানববন্ধন

নৌ নিরাপত্তা নিয়ে সাংবাৎসরিক তৎপরতার হিসাব-নিকাশ ও পরের বছরের পরিকল্পনার জন্য একটি নৌ নিরাপত্তা দিবসের দাবিতে মানববন্ধন ও গণস্বাক্ষর অভিযান করেছে ‘নোঙর বাংলাদেশ’।

সোমবার সকালে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে এ কর্মসূচির আয়োজন করে নদী ও প্রাণ-প্রকৃতি নিরাপত্তার সামাজিক সংগঠনটি।

২৩ মেকে দিবস ঘোষণার কারণ হিসেবে সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০০৪ সালের ২৩ মে মাদারীপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা ১৫৬টি তালি দেওয়া চলাচলের অযোগ্য লঞ্চ ‘এমভি লাইটিং সান’ ও ‘এমভি দিগন্ত’ মেঘনা নদীতে গভীর রাতে ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে গিয়েছিল। নদীতে সে রাতে কচুরিপানার মতো ঢেউয়ের সঙ্গে ভেসেছিল প্রায় দুই শতাধিক মৃতদেহ। এ ক্ষেত্রে সেই মর্মান্তিক দিনটি উপযুক্ত দিবস হতে পারে।

সংগঠনটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নদীমাতৃক দেশে নদীতে মানুষ ও সম্পদ বাঁচাতে জাতীয় একটি দিবসও ঘোষণা আজ সময়ের দাবি। এ বিষয়ে নোঙরের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে। আমরা তার সুদৃষ্টি কামনা করছি। সেই সঙ্গে দেশের সব মানুষকে এ দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণার আহ্বান জানাচ্ছি।

মানববন্ধনে নোঙর প্রতিষ্ঠাতা সুমন শামস এর সভাপতিত্বে বক্তারা তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। এ সময় সভার প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট্য নাট্যজন ও সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব জনাব রামেন্দু মজুমদার। বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত স্ংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জনাব গোলাম কুদ্দুস। নৌ-পরিবহণ বিশেষজ্ঞ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব তোফায়েল আহম্মেদ, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জনাব মিহির বিশ্বাস, শিল্পী ভাস্কর রাসা।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতি কর্মী এবং সম্পাদক আবীর বাঙ্গালী, কবি সমর চক্রবর্তী, কবি কামরুজ্জামান, কবি ও সংগঠক ইসমত শিল্পী, সমাজ সেবক আখলাকুর রহমান মাইনু, সংগঠক রফিকুল ইসলাম মজনু। নোঙর সদস্য ফজলে সানি, সৈয়দা রিমি কবিতা, আমিনুল হক চৌধুরী, এফ এই সবুজ, বাহারুল ইসলাম টিটু, শিল্পী অভিলাস দাসসহ আরো অনেকে।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, নৌপথগুলোর ওপর যেমন মানুষের চাপ বাড়ছে, তেমনি ক্রমশ কমছে সরকারি সংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়হীনতা, দুর্বল নজরদারি, ব্যবস্থাপনা এবং যথাযথ আইন-কানুন প্রয়োগের অভাব রয়েছে, যে কারণে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নদীতে ঘটে গেছে অনেক নৌ দুর্ঘটনা; যা অনেকের জীবনের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।

অভ্যন্তরীণ নৌ কর্তৃপক্ষ তাদের কাজের ক্ষেত্রটি প্রতিনিয়তই সংকুচিত করে আনছে বলে অভিযোগ করা হয়। বক্তারা জানান, উত্তরবঙ্গের সঙ্গে রেলওয়ে যাত্রী পারাপারের পথ হিসেবে ব্যবহূত বাহাদুরাবাদ-বালাসী নৌবন্দরের স্টিমার সার্ভিস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অথচ সেখানে মানুষের প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়নি। বর্তমান রংপুর বিভাগের জেলাগুলোতে যাতায়াতকারী মানুষ ঝুঁকি নিয়ে নৌপথ পারাপার হচ্ছে এবং এই হার এখনও বেড়েই চলেছে। উন্নত ও আধুনিক যাতায়াতের নামে নৌপথকে উপেক্ষার চোখে দেখে সড়কপথের প্রতি বেশি প্রাধান্য পেয়েছে।

১৯৮৫ থেকে ২০০৯ সময়কালে উল্লেখযোগ্য নৌ দুর্ঘটনার সংগৃহীত সরকারি তদন্ত প্রতিবেদনে সর্বমোট ২৭৮টি সুপারিশ রয়েছে বলে জানায় সংগঠনটি। বক্তারা অভিযোগ করেন, প্রতিবেদনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের কোনো চেষ্টাই হয়নি। এতে দিন দিন নৌ দুর্ঘটনার বিষয়টি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। নৌপথ নিয়ে বিভিন্ন অনুসন্ধানে তিনটি মূল ক্ষেত্রকে কারণ হিসেবে তুলে ধরা যায়।

প্রথমত, দেশের দক্ষিণাঞ্চলে চলাচলরত লঞ্চ মালিকরা সুকৌশলে নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষকে নিয়ন্ত্রণে রেখে উপর্যুপরি মুনাফা লাভে ২০০২ সাল থেকে মালিকরা লঞ্চ চালনায় নিয়ন্ত্রণসূচি বা রোটেশন পদ্ধতির সূচনা করেন।

দ্বিতীয়ত, রোটেশন অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট দিনে শুধু একটি মালিকের লঞ্চ চলাচল করবে। ফলে অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই ও ভাড়া আদায়সাপেক্ষে মালিকরা একচেটিয়া লঞ্চ পরিচালনা করে থাকেন। এতে যাত্রীরা ভিন্ন লঞ্চের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কম ভাড়া নির্ণয়ের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়ছে এবং অনৈতিক বা চাপিয়ে দেওয়া নির্ধারিত ভাড়ায় যাতায়াত করতে যাত্রীরা বাধ্য হচ্ছে।

তৃতীয়ত, কোনো দুর্ঘটনার পর শুধু পক্ষপাতদুষ্ট তদন্ত প্রতিবেদন ও প্রকৃত অপরাধীদের রক্ষা করাই হয় না; তদন্ত কমিটিও অসম্পূর্ণ ও ত্রুটিপূর্ণ। কারণ নৌ মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত স্থায়ী তদন্ত কমিটিতে কোনো নৌ প্রকৌশলী, পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ, নৌপরিবহন বিষয়ক গবেষক এবং মালিক ও যাত্রী প্রতিনিধি রাখা হয় না।

চতুর্থত, দুর্ঘটনার পর উদ্ধার কাজের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী সরঞ্জামাদি ও জনবল থাকে না।