১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যাকাণ্ডের মধ্যদিয়ে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে উল্টোপথে পাঠানোর যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, তার পূর্ণতা পায় জেলখানায় ঢুকে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ জাতীয় চার নেতাকে হত্যার মাধ্যমে।
জাতির জনকের ঘাতকেরা ওই বছরের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রবেশ করে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীর সেনানী সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সামরিক জান্তার হাতে আটক বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে জাতীয় এ চার নেতা দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের নেতৃত্ব দান করে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলেন।
পৃথিবীর ইতিহাসে কারাগারে কারও প্রতি বিরাগের বশবর্তী হয়ে গুলি করে হত্যার ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল হলেও একাত্তরের পরাজিত শক্তি এমন কলঙ্কজনক অধ্যায় রচনা করেছে।
পাকিস্তানী বর্বর শাসকগোষ্ঠীর কবল থেকে স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশ বিরোধীরা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বিশ্বাসঘাতক এবং ষড়যন্ত্রকারীদের মূল ভয় ছিল ওই জাতীয় চার নেতাকে ঘিরে। খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে ঘাতকরা যখন জাতীয় চার নেতাকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার প্রলোভন দেখিয়ে নিজেদের দলে নিতে ব্যর্থ হয়, তখনই বেছে নেয় এই ঘৃণ্য পথ। তাদেরকে নির্মমভাবে হত্যার পর পাল্টে দেয়া হয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাভাবিক গতিপথ। এরপর বলতে গেলে এখনও পুরোপুরি সঠিক পথে আসতে পারেনি বাংলাদেশ।
জাতির জনকসহ জাতীয় নেতাদের হারিয়ে দেশের যে ক্ষতি হয়েছে তা কখনোই পূরণ হওয়ার নয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো- এখনও যদি বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জাতীয় চার নেতার নাম জিজ্ঞেস করা হয়, অনেকেই চারজনের নাম পুরোপুরি বলতে পারে না! এটি অবশ্য একদিনে হয়নি। তাদেরকে হত্যার পর থেকে পাঠ্যপুস্তক থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ে তাদের দূরে রাখার অপচেষ্টা করা হয়েছে। তাই এখন তাদের আদর্শ সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়া আমাদের জাতীয় জীবনের অন্যতম প্রধান ব্রত হওয়া উচিৎ।
জাতীয় চার নেতা মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও দেশবিরোধী শক্তির সাথে কোন ধরণের আপোষ না করে দেশপ্রেমের উজ্জ্বল উদাহরণ হয়েছেন। বিশ্ব ইতিহাসেও রাজনৈতিক নেতৃত্বের এমন দেশপ্রেমের উদাহরণ বিরল। শুধু বাংলাদেশ নয়, তারা সারাবিশ্বেই হতে পারেন দেশপ্রেমের রোল মডেল।
এখন তাদের আদর্শ সবার মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে বৈশ্বিক পরিসরে তাদের অবদানের বিষয় তুলে ধরতে হবে। এজন্য সরকারকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে আমরা আহ্বান করছি।
একইসঙ্গে ব্যক্তি পর্যায়ে যে যার অবস্থান থেকেও জাতীয় চার নেতার আদর্শ ছড়িয়ে দিতে পারেন। আমাদের সবাইকে এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই নির্মমতার শিকার জাতীয় চার নেতার প্রতি প্রকৃত সম্মান জানানো হবে। জাতীয় চার নেতাকে হারানোর এই বেদনার ক্ষণে তাদের স্মৃতির প্রতি রইলো আমাদের অতল শ্রদ্ধা।