জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) নতুন কাঠামো এবং গতিশীলতার সাথে একটি নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। ২০৩০ সালের এজেন্ডা এবং এর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) কে সামনে রেখে, আমাদের কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থাকে সামগ্রিকভাবে অতি শিগগিরই পরিবর্তন করতে হবে।
উৎপাদক, পরিবেশক এবং ভোক্তা সাথে সরকারি, বেসরকারি খাত, শিক্ষাবিদ এবং সাধারণ নাগরিক সহ হাতে হাত মিলিয়ে এই রূপান্তর সফল করতে একটি পদ্ধতিগত দৃষ্টিভঙ্গি এবং সকলের সম্মিলিত পদক্ষেপের প্রয়োজন।
এটাই আসন্ন জাতিসংঘের খাদ্য ব্যবস্থাপনা সম্মেলন এর মূল প্রতিপাদ্য, এবং এটাই এফএও নতুন কৌশলগত কাঠামো ২০২২-২০৩১ এর মাধ্যমে আমাদের সকল অংশীদারদের সাথে নিয়ে অর্জন করতে চায়। আমাদের প্রত্যেকের কর্মই আমাদের কৃষি খাদ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে পৃথিবীর ভবিষ্যত নির্ধারণ করে।
সামিট সময়োপযোগী। কয়েক দশকের পতনের পর, ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা গত পাঁচ বছর ধরে বৃদ্ধি পেয়ে এখন ৮১১ মিলিয়ন মানুষের কাছাকাছি। একই সময়ে, স্থূলতা এবং অন্যান্য সংক্রামক নয় এমন রোগও এখন ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক সমস্যা যা অপর্যাপ্ত বৈচিত্র্যময় স্বাস্থ্যকর ডায়েট এবং খাদ্য গ্রহণের ধরনের সাথে সংযুক্ত। বর্তমান কৃষি-খাদ্য চর্চার অনেকগুলি আমাদের পৃথিবীর জন্য অনেক হানিকারক হয়ে পরেছে। আমাদের কৃষি খাদ্য ব্যবস্থা সঠিকভাবে কাজ করছে না। তাদের রূপান্তর করার জন্য আমাদের কী করতে হবে? কিভাবে প্রতিটি ব্যক্তি এই সম্পূর্ন পদ্ধতির উপর প্রভাব ফেলে?
এই ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক সংস্থা হিসাবে, এফএও কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থার রূপান্তরের পক্ষে কাজ করছে এবং সাহায্য করছে। “কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থা” -চাষের টাল থেকে টেবিলের যাত্রা জুড়ে আছে যা একদম রোপণ, বৃদ্ধি, ফসল তোলা, প্রক্রিয়াজাত করণ, প্যাকেজিং, পরিবহন, বিতরণ, বাণিজ্য, ক্রয়, প্রস্তুত, খাদ্য গ্রহণ এবং নিষ্পত্তি জুড়ে বিস্তৃত। এটি বিভিন্ন অ-খাদ্য পণ্য যেমন বনায়ন, প্রাণী পালন, ফিডস্টক ব্যবহার, জৈব জ্বালানি এবং ফাইবার উৎপাদনেও কাজ করে এবং সমস্ত কার্যকলাপ, বিনিয়োগ এবং সিদ্ধান্ত নিয়ে তৈরি এবং সকলের জীবিকার উপর এটি প্রভাব ফেলে যারা এই কৃষি-খাদ্য পণ্য পেতে আমাদের সাহায্য করে।
নীতি এবং সম্ভাব্যতা, বিজ্ঞান উদ্ভাবন, ভূমি ও জল, প্রাণিসম্পদ এবং মৎস্য, জীববৈচিত্র্য এবং জলবায়ু, খাদ্য নিরাপত্তা আদর্শ, ভূ -স্থানিক তথ্য এবং ডিজিটাল প্রযুক্তির দক্ষতার সাথে, এফএও এই গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক শীর্ষ সম্মেলনের প্রস্তুতিতে সর্বাগ্রে রয়েছে, এবং সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ যেটা, এফএও এর নিজস্ব নিয়মাবলীর সাথে সামঞ্জস্য রেখে সামিটের পরে ফলো-আপ করে পদক্ষেপ বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
জুলাই মাসে, জাতিসংঘের ফুড সিস্টেম প্রাক-শীর্ষ সম্মেলন রোমে এফ এ ও সদর দফতরে সফলভাবে জাঁকজমকপূর্ণের সাথে অনুষ্ঠিত হয়। এফএও এর এর প্রধান অর্থনীতিবিদ এবং প্রধান বৈজ্ঞানিকের সাথে, আমি সামিট উপদেষ্টা সংস্থা, বৈজ্ঞানিক দল এবং অ্যাকশন ট্র্যাকগুলিতে নিয়মিত বসেছি। আমরা জাতিসংঘ ব্যবস্থার ভিতরে এবং বাইরে বিশেষজ্ঞ সহকর্মীদের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছি। ১৪০টিরও বেশি দেশের উপস্থিতির সাথে আমাদের দল “জাতীয় সংলাপ” এ সাহায্য করে আসছে যা সামিটের ফলাফল এবং জাতীয় অগ্রাধিকারে অবদান রাখে যাতে তারা লক্ষ্য অর্জন করতে পারে এবং সুনির্দিষ্ট সমাধান পেতে পারে।
বিশ্বব্যাপী কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থার রূপান্তর শেষ পর্যন্ত দেশ এবং স্থানীয় পর্যায়ে কর্মের উপর নির্ভর করে। সংস্কৃতি যার মধ্যে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক। দেশজুড়ে এবং অভ্যন্তরে কতটা বৈচিত্র্যময় কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থা আছে তা দেখার জন্য কেবল খাবারের দিকে নজর দেওয়া দরকার। আমাদের অর্ধেকেরও বেশি – প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন মানুষ – সরাসরি কৃষি -খাদ্য উৎপাদন শৃঙ্খল, সরবরাহ শৃঙ্খলা এবং মূল্য শৃঙ্খলার মাধ্যমে আমাদের জীবিকা অর্জন করে আসছে। এবং আমরা সবাই খাবারের ভোক্তা এবং গেম-চেঞ্জার।
রূপান্তর করতে কি লাগে? আমরা এফএও তে চারটি ক্রস-কাটিং/ক্রস-সেকশনাল এক্সিলারেটর চিহ্নিত করেছি-প্রযুক্তি, উদ্ভাবন, তথ্য এবং “পরিপূরক” (গভর্নেন্স, মানব মূলধন এবং প্রতিষ্ঠান)। এফএও গত দুই বছর ধরে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটির নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য সংগঠিত হয়ে আরও ভালভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে। সদস্যদের দ্বারা অনুমোদিত আমাদের নতুন স্ট্র্যাটেজিক ফ্রেমওয়ার্কটি “ফোর বেটার”- উন্নত উৎপাদন, উন্নত পুষ্টি, উন্নত পরিবেশ, এবং একটি ভাল জীবন এর জন্য আরও দক্ষ, সবকিছু অন্তর্ভুক্ত, শক্তিশালী এবং টেকসই কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থায় রূপান্তরের মাধ্যমে এসডিজি অর্জনকে সাহায্য করার দিকে মনোনিবেশ করেছে।
আমরা আমাদের সাংগঠনিক কাঠামোকে আরও মডুলার এবং সহজ করার জন্য সংস্কার করেছি যাতে আমরা নিজেদেরকে উদ্দেশ্যপূর্ণ করে তুলতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, প্রধান বিজ্ঞানীর নতুন সৃষ্ট পদ সাথে একটি উদ্ভাবন কার্যালয় এবং এসডিজি-র কার্যালয় স্থাপন করে প্রধান অর্থনীতিবিদ দ্বারা পরিচালিত সামাজিক-অর্থনৈতিক কাজকে পরিপূরক করার জন্য বিজ্ঞান ও উদ্ভাবনের ভূমিকা জোরদার করার লক্ষে জোরদার পদক্ষেপ নিয়ে এসডিজির কৃতিত্ব ট্র্যাক করতে। উদ্ভাবন শুধু প্রযুক্তি নয়। এটি পন্থা এবং নীতিও। এটা সম্পূর্ণ একটি মাইন্ডসেট।
দেশ, জাতি এবং শিল্প তাদের রূপান্তরের পথ নির্ধারণ করবে। আমাদের লক্ষ্য বাস্তবসম্মত: সদস্যদের মালিকানা গড়ে তোলা এবং কথা বলার মাধ্যমে সদস্যদের সাহায্য করা এবং সুনির্দিষ্ট ফলাফল অর্জন করা।
এফএও- এর দক্ষতা এবং জনবল রয়েছে, এবং সহায়তার জন্য অনেক মাধ্যম রয়েছে। আমাদের হ্যান্ড-ইন-হ্যান্ড ইনিশিয়েটিভ ওপেন-অ্যাক্সেস ভূ-স্থানিক প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করেছে যা বনভূমি, কার্বন সিকোয়েস্ট্রেশন সম্ভাব্যতা এবং জল বাষ্পীভবন হার গণনা করতে পারে। আমাদের প্রাথমিক সতর্কীকরণ নেটওয়ার্ক সিস্টেম আসন্ন খরা বা ফসলের কীটপতঙ্গ সম্পর্কে সতর্ক করতে পারে। আমাদের অ্যাপ্লিকেশনগুলি খরা- বা সংঘাতপ্রবণ এলাকায় প্রাণী সরবরাহ এবং চাহিদার অবস্থা গণনা করতে পারে।
তদুপরি, আমাদের নতুন মডেলিং কাজ সহ আমাদের বিশ্লেষণমূলক কাজ, সম্প্রতি প্রস্তাবিত কার্যক্রম এবং সিস্টেম এর প্রভাব এবং লেনদেনের মূল্যায়ন করেছে যা প্রায়শই ক্ষতিকারক সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত প্রভাব ফেলে, পাশাপাশি কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থার জন্য আর্থিক সহায়তা কীভাবে আরও ভালভাবে ব্যবহার করা যায় তা নির্ধারণ করে।
এফএও ইতিমধ্যে ভাল অবস্থানে রয়েছে এবং সামিটের ফলাফল এর ব্যপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে সকল অংশীদারদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে সম্পূর্ণ দায়িত্ব নেওয়ার জন্য প্রস্তুত।
কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থা জটিল এবং বৈচিত্র্যময়। আমরা সকলেই একমত যে তারা তাদের পূর্ণ সম্ভাবনা উপলব্ধি করবেনা না যদি আমরা গতানুগতিকভাবে চলতে থাকি। ‘ফোর বেটার’ অর্জনের জন্য আমাদের সমাধান তৈরি করতে হবে এবং সবাইকে সাথে নিয়ে কাজ করতে হবে। অংশীদারদের সাথে একত্রিত হয়ে এফ এ ও এর একটি উন্নত বিশ্ব তৈরির জন্য এই কাজটি পরিচালনা করার সক্ষমতা রয়েছে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)