চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

জাতিসংঘের ডাকে কি সাড়া দেবে মিয়ানমার?

২৫ আগস্টের পর থেকে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী আগুন দিয়ে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের যে ৫৫টি গ্রামসহ ৩৬২টি গ্রাম সম্পূর্ণ বা আংশিক ধ্বংস করেছে, তাদের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে জাতিগত নিধন ও গণহত্যার অভিযোগ উঠেছে। নিষ্ঠুরতা-নৃশংসতার গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ নষ্ট করার পাশাপাশি ওইসব বিষয়ে ‘সুস্পষ্ট প্রমাণ’ চায় মিয়ানমার সরকার! মিয়ানমারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা থাউং তুন সুইজারল্যান্ডে সাংবাদিকদের সামনে কথা বলার সময় রাখাইনে কিছুই হয়নি, এমন ভঙ্গিতে নানা ফিরিস্তি দিয়ে বক্তব্য দেন। বুলডোজার দিয়ে প্রমাণ নষ্ট করার বিষয়ে কিছুদিন আগে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবি প্রকাশ করে জানিয়েছিল, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নির্যাতন ও উচ্ছেদের ঘটনা ঘটা গ্রামগুলোতে বুলডোজার চালিয়ে সমান করে ফেলা হয়েছে। গ্রামগুলোতে চালানো জ্বালাও-পোড়াওয়ের চিহ্ন মুছে ফেলার মিয়ানমার সরকারের এই তৎপরতাকে নিন্দা জানিয়েছে সংস্থাটি। এছাড়া জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের সম্ভাব্য প্রমাণ মুছে ফেলতে মিয়ানমার সেখানে থাকা গণকবর গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। তাদের সেনাবাহিনীও নিজেদের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণে কালক্ষেপণ করেছে। কিন্তু সব ধরণের নির্যাতনের সঙ্গেই সেনাবাহিনী জড়িত বলে অভিযোগ আছে। উপরন্তু জাতিসংঘের তদন্ত দলকে সেখানে ঢুকতে দেয়নি মিয়ানমার। সেদেশে সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মীসহ কাউকেই প্রবেশ করতে না দিয়ে এ ধরণের প্রমাণ দাবি করা মিয়ানমারের একটি উপহাস বলে আমরা মনে করি। জাতিসংঘ মহাসচিবের গণহত্যা প্রতিরোধ বিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টা আদামা দিয়ান রোহিঙ্গা ইস্যুতে ৮ দিনের সফরে এখন বাংলাদেশে। তিনি বেশ কয়েকদিন কক্সবাজারে অবস্থান করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো ঘুরে দেখেছেন। রাখাইনের গণহত্যা-বর্বরতার সাক্ষী বাস্তুচ্যুত নারী-পুরুষদের সঙ্গে কথা বলেছেন। নিউইয়র্কে ফিরে তিনি এ নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুঁতেরেজের কাছে রিপোর্ট করবেন। রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ঘুরে এসে আদামা দিয়ান বলেছেন, স্বাধীন তদন্ত কমিটির মাধ্যমে গণহত্যার আলামত সংগ্রহে জাতিসংঘ মিয়ানমার যেতে চায়। রোববার (১১ মার্চ) দুপুরে মানবাধিকার কমিশন কার্যালয়ে কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা জানান। বৈঠকে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন ও জাতিসংঘের তৎপরতা বিষয়ে জানান তিনি। পরে সাংবাদিকদের বৈঠকের ব্যাপারে বিস্তারিত জানান কমিশন চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, গণহত্যার আলামত ও সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহে কমিশন কাজ করছে। কমিশনের কাছেও দিয়ান তথ্য চেয়েছেন। তবে এখন দেখার বিষয়, মিয়ানমার কীভাবে সাড়া দেয়। ১০ লাখ রোহিঙ্গার থাকা-খাওয়ার চাপ, পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টসহ নানা অনিশ্চয়তা ও হতাশা থাকলেও জাতিসংঘের অবস্থান ইতিবাচক বলে আমাদের মনে হয়েছে। ইতিহাস বলে, আন্তর্জাতিক আদালতে গণহত্যার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ এলে এ ধরণের তথ্য প্রমাণ ও রিপোর্ট কাজে আসে। মানবিক দিক সবার উপরে রেখে আন্তর্জাতিক এই সমস্যার বলি যেনো বাংলাদেশ না হয়, বরং কূটনৈতিক চাপ ও নাগরিক তৎপরতা জারি রেখে এই সমস্যা সমাধানে অগ্রগতি হবে বলে আমাদের আশাবাদ।