চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

জাগালো-বেকেনবাওয়ারের ‘অভিজাত ক্লাবে’ দেশম

মঞ্চটা প্রস্তুতই ছিল। ফ্রান্স সেটি জয়েই রাঙিয়েছে। তাতে দলটির কোচ দিদিয়ের দেশম উঠে গেছেন প্রাপ্তি-মর্যাদার উচ্চ শিখরে।

ক্রোয়েশিয়াকে ২-৪ গোলে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে ফ্রান্স। আর ফরাসিদের হয়ে খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ ট্রফি উঁচিয়ে ধরলেন দেশম। ১৯৯৮তে বিশ্বকাপ জেতার সময় অধিনায়কও ছিলেন তিনি। তার আগে এমন কীর্তিতে নাম লেখাতে পেরেছিলেন কেবল দুজন।

অভিজাত ক্লাবের সেই শিখরে পায়ের ধুলো পড়েছিল ব্রাজিলের মারিও জাগালো ও জার্মানির ‘কাইজার’ ফ্রেঞ্জ বেকেনবাওয়ারের। দেশমের আগে কেবল এ দুজনই খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপ তো জিতেছেনই, পরে কোচ হয়েও নিজেদের নামের পাশে আরও একবার যোগ করেছেন বিশ্বজয়ীর তকমা।

প্রথমে আসা যাক জাগালো বন্দনায়। পাঁচবারের বিশ্বসেরা ব্রাজিল তাদের প্রথম বিশ্বসেরার শিরোপা তথা জুলেরিমে ট্রফি ঘরে তোলে ১৯৫৮ সালে। সেই দলের সদস্য ছিলেন জাগালো। পরেরবার অর্থাৎ, ১৯৬২ সালে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বসেরা সেলেসাওরা। জাগালো ছিলেন সেই দলেও।

১৯৫৮-৬২ সালে বিশ্বকাপ জিতলেও ফুটবল দুনিয়া এ দুই আসরকে জানে পেলে-গারিঞ্চার বিশ্বকাপ হিসেবে। জাগালো রইলেন পেছনের সারিতে! তাই নিজের নাম ইতিহাসে পাকাপোক্ত করতে ১৯৭০ বিশ্বকাপে অবস্থান পরিবর্তন করলেন। যে পেলেদের সঙ্গে একসঙ্গে খেলেছেন, হয়ে গেলেন তাদেরই কোচ। আর কোচ হয়েই বাজিমাত। প্রথমবারের মতো খেলোয়াড় ও কোচের আসনে বিশ্বসেরা কোনো কিংবদন্তিকে পেল ফুটবল বিশ্ব।

পরের ইতিহাসটা বেকেনবাওয়ারের। ব্রাজিলের তৃতীয়বার শিরোপা জয়ের পরেরবার, অর্থাৎ ১৯৭৪ সালে নিজেদের দ্বিতীয় শিরোপা ঘরে তোলে ওয়েস্ট জার্মানি। একজন ডিফেন্ডার ছিলেন, ছিলেন অধিনায়ক, পরে শিরোপা উঁচিয়ে ধরায় ইতিহাসেই স্থান পেয়ে যান বেকেনবাওয়ার।

এতটুকু হলেই চলতো। কিন্তু অমরত্বের পথ ধরতে ফুটবল কোচিংকে বেছে নেন দ্যা কাইজার। ওয়েস্ট ও ইস্টকে এক করে অভিভক্ত জার্মানিকে তুলে দিলেন ১৯৯০ বিশ্বকাপের ফাইনালে। প্রতিপক্ষ ডিয়েগো ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা। এরপর ভাগ্যের ছোঁয়াই হোক কিংবা রেফারির বদান্যতায়, সেই ম্যাচে বিতর্কিত এক পেনাল্টিতে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে জার্মান অধিনায়ক লোথার ম্যাথিউসের হাতে ওঠে শিরোপা। যে দলের কোচ ছিলেন কিংবদন্তি বেকেনবাওয়ার।

জাগালো কিংবা বেকেনবাওয়ারের থেকে এমনিতেই বেশ সুবিধাজনক স্থানে ছিলেন দেশম। রেমন্ড কোপা, মিশেল প্লাতিনি কিংবা জিনেদিন জিদানের মতো কিংবদন্তির থেকে আলাদাভাবেই তাকে মনে রাখতো ফুটবল বিশ্ব। কারণ ফ্রান্সের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ী দলের অধিনায়ক তিনি।

দেশম যখন বিশ্বজয়ী অধিনায়ক

বিশ্বজয় করে খেলা ছাড়লেন ঠিকই, কিন্তু ফুটবলকে ছাড়লেন না দেশম। ১৯৯৮ বিশ্বকাপের মাস্টার মাইন্ড কোচ ও গুরু আইমে জাকুয়েটের কাছে দীক্ষা নিলেন, হলেন ফুটবল কোচ। গুরুর দর্শনের সঙ্গে নিজের দর্শন যোগ করলেন। ২০১৬ ইউরো ও ২০১৮ বিশ্বকাপের জন্য বেঁছে নিলেন অপেক্ষাকৃত এক তরুণ দল। তাতে দেশমের নিন্দা হল, কিন্তু সিদ্ধান্ত থেকে টলানো গেল না। তাই ২০১৬ ইউরোর ফাইনাল থেকে যখন খালি হাতে ফিরল ফ্রান্স, দেশমের ব্যক্তিত্ব ও প্রতিজ্ঞা নজর কাড়ল ফেডারেশন কর্তাদেরও। দেশমও দেখিয়ে দিলেন ভুল লোকের হাতে পড়েনি লা ব্লুজদের দল।

সবমিলিয়ে রাশিয়া আসরে দেশমের সামনে ছিল অমরত্বের আরেকধাপে পৌঁছার সুযোগ। জাগালো-বেকেনবাওয়ারদের ক্ষুদে অভিজাত তালিকায় নাম লেখানোর। রোববার সেটা হাতছাড়া করেননি। লুঝনিকিতে ফাইনালে শেষ হাসি হেসেছে অভিজ্ঞতায় তরুণ দল ফ্রান্স। যার কোচ, মাস্টার মাইন্ড, অন্যতম রূপকার দেশম। ৪৯ বছর বয়সী কোচ দেশম!