জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে বাড়ছে লবনাক্ততা। শুষ্ক মৌসুমে দেখা দিচ্ছে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। লবনপানি খেয়ে অনেকেই ভুগছেন জটিল স্বাস্থ্য সমস্যায়।
মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের গবেষণায় দেখা গেছে, সমুদ্রের পানি বাড়ায় উপকূলীয় এলাকায় গত ১০ বছরের ব্যবধানে লবণাক্ত জমির পরিমাণ বেড়েছে ৮ লাখ ৫৬ হাজার হেক্টর। উপকূলীয় এলাকার নদীর পানিতে সমুদ্রের পানি মিশে বাড়ছে লবণাক্ততা।
খুলনার দাকোপের এ গ্রামটির নাম খলিশাবুনিয়া। লবণাক্ততা এবং চিংড়ি চাষ থেকে কৃষি জমি রক্ষায় ওই এলাকার কৃষকদের আন্দোলন করতে হয়েছে। এখন তাও যে জমিতে ১৮ থেকে ২০ মণ ধান উৎপন্ন হয়, চিংড়ি চাষ চলাকালে সে সব জমিতে ২/১ মণের বেশি ধান হতো না। কোনো কোনো জমিতে ধান একেবারেই চাষ করা যেত না বলে জানিয়েছেন স্থানীয় চাষীরা।
উপকূলে যতই কাছে যাওয়া যায় লবণাক্ততা ততই বেশি। খলিশাবুনিয়া থেকে ১০ কিলোমিটার দূরের গ্রাম কালাবোগী। লবণাক্ততার কারণে সেখানে টিউবওয়েলের পানি পান করা যায় না। অনেক সময় না ফুটিয়েই সেই পানি পান করেন এলাকাবাসী।
বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় অনেকে বাধ্য হয়ে লবণাক্ত পানি পান করে আক্রান্ত হচ্ছেন নানা স্বাস্থ্য সমস্যায়। জরুরী অবস্থায় সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছাতে না পেরে অনেক রোগী মারা যায় ট্রলারেই।
দাকোপ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেল সেখানে অধিকাংশ রোগীই নারী এবং শিশু। লবণাক্ততাই এদের রোগের প্রধান কারণ।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডা. সন্তোষ কুমার মজুমদার জানান, গর্ভবতী নারী যদি লবণাক্ত পানি পান করেন, ব্যবহার করেন এবং এ পানি দিয়ে রান্না করেন তবে এই পানি থেকে লবণ তার শরীরে ঢুকে পড়ে রক্তে মিশে যায়। এর ফলে রক্তের আয়তন বেড়ে যায়।
তিনি জানান, লবণাক্ত পানি এভাবে পানে গর্ভবতী নারীর যে প্রধান জটিলতা হয় তার মধ্যে রয়েছে গর্ভকালীন বিশেষ উচ্চ রক্তচাপ (Pregnancy Induced Hypertension), প্রি-একলাম্পশিয়া ও একলাম্পশিয়া। শিশুর ওপর ফল আরও ভয়াবহ। এক্ষেত্রে গর্ভপাত হতে পারে, শিশু জন্মের আগে গর্ভেই মারা যেতে পারে অথবা অপরিণত শিশুর জন্ম হতে পারে।
কিছু বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া হলেও লবণাক্ততা যে হারে বাড়ছে তাতে খুব শিগগিরই উপকূলের এ এলাকাগুলোতে স্বাস্থ্য জটিলতা আরও বাড়বে বলে আশংকা করছেন চিকিৎসকরা।