দু’চোখে দেখতে পান না কিছুই। পুরোপুরি দৃষ্টিহীন। অথচ তিনি দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়ান। পাহাড়-পর্বত চষে বেড়ান। ছবি তুলেন প্রকৃতির নানা সৃষ্টিরাজির। পাহাড়-পর্বত, বৃক্ষ, নদী-সাগর, জীবজন্তু তার ক্যামেরায় ধরা পড়ছে দুর্দান্তভাবে।
ফটোগ্রাফার প্রণব লাল। ৩২ বছরের একজন ভারতীয় যুবক। জন্ম থেকেই যিনি দৃষ্টিহীন। তিনি রাজধানী নয়াদিল্লীর কন্সালট্যান্ট।
দৃষ্টিহীন চোখ নিয়ে ছবি তোলার এ কাজে তাকে শক্তি যুগিয়েছে ‘ভয়েস’ নামের একটি প্রযুক্তি। যেটি কৃত্রিম চোখ হিসেবে কাজ করে। আর তার হেডফোন শব্দ শুনতে সহযোগিতা করে। তথা শব্দের ওপর নির্ভর করে তিনি প্রকৃতির ছবি ধারণ করেন।
কয়েক বছর আগে এক ছুটির কথা। আইসল্যান্ডে প্রণব লাল নর্দান লাইটস অনুভব করেন। তার মাথার উপরে তা নেমে উঠলে শব্দের সাহায্যে চিত্র ধারণ করেন প্রণব। এটি মেরুজ্যোতি বা মেরুপ্রভা অথবা আকাশে একধরনের প্রাকৃতিক আলোর প্রদর্শনী। তারই চিত্রধারণ করেন তিনি।
সিএনএন বলছে, ১৯৮০ এর দশকে ডাচ ইঞ্জিনিয়ার পিটার মেইজার কর্তৃক উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ভয়েস। প্রযুক্তির এই উৎকর্ষতার সহযোগিতা নিয়েই প্রণব লাল মাতিয়ে দিচ্ছেন ছবি তুলে। মেইজারের প্রযুক্তি এটিকে ছবিযুক্ত দর্শনে সহযোগিতা যোগাচ্ছে। তা দ্বারা চোখের চশমা অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ডিভাইসের সঙ্গে যুক্ত করে। এমনকি লাল তার ল্যাপটপের স্ক্রিনে সফটওয়্যার ব্যবহার করে অনলাইনে কেনাকাটা এবং বাইরের জায়গার চিত্র দেখার সুযোগ নেন। এর ফলে প্রণব লাল ফটোগ্রাফিতে মনোনিবেশ করতে সমর্থ হয়েছেন।
প্রণব লালন বলেন, এসব প্রযুক্তি আমাকে সাহায্য করেছে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমি যা দেখছিলাম তা বিশ্বের সঙ্গে শেয়ার করে নিতে চেয়েছিলাম।
তিনি বলছিলেন, আমার কাছে ফটোগ্রাফির চেয়ে একধরনের অনুসন্ধান এবং পরিবেশের দিকে নজর দেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি যখন ভ্রমণ করি, এখন সত্যিকারের পর্যটক হিসেবে নিজেকে অনুভব করতে পারি। বিজ্ঞানে আমার আগ্রহ প্রবল।
যদিও করোনা মহামারীতে প্রণব লালের ভ্রমণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পৃথিবী পুনরায় উন্মুক্ত হলে তিনি চান রাশিয়ার কামচটকা উপদ্বীপের পর্বতগুলোতে ভ্রমণ করতে।
এমনকি তিনি ভয়েস প্রযুক্তি ব্যবহার করে সমুদ্রের তলদেশে প্রকৃতির কি সৃষ্টি রয়েছে তা তুলে আনতে চান তার ফটোগ্রাফির মাধ্যমে।