উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ও ছোট গল্পের বরপুত্র হাসান আজিজুল হকের ৮০ তম জন্মদিন উদযাপন করা হয়েছে।
শনিবার বিকেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়নে এক নাগরিক সংবর্ধনার আয়োজন করে জন্মোৎসব উদযাপন পরিষদ।
জন্মদিনে কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক বলেন, ‘নিজের ৮০তম জন্মদিনের অনুষ্ঠানে কিছু বলার মতো ভাষা আমার নেই। এই বয়সে এসেও সবার যে অকৃত্রিম ভালবাসা আমি পেয়েছি তা অসামান্য। সবার ভালবাসা পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করছি।’
‘‘আমি যা জানতাম তা সবসময় মানুষকে জানানোর চেষ্টা করেছি। অন্যের থেকে নিজের অজানাকে আবিষ্কার করেছি। এখন বয়স বেড়েছে, আগের মতো সবকিছু করতে পারিনা। তবে এখনও স্মৃতিশক্তি কমে যায়নি। যে কয়দিন বাঁচি লেখালেখি চালিয়ে যেতে চাই। আমার লেখায় যদি মানুষের কল্যাণ হয় এবং পাঠক যদি আনন্দিত হয় এতেই আমি নিজেকে স্বার্থক মনে করবো।’’
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে শ্রোতাদের কিশোর বেলার গল্প শোনান কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। বলেন, ‘মানুষের বাক অনেক সময় এমনিতেই রুদ্ধ হয়ে যায়, আমারও ঠিক তাই। সত্যি সত্যি ভালোবাসা মানুষকে অন্ধ করে দেয়। অনেক সময় ভালো-মন্দ কিছুই বিচার করে না। মানুষই এভাবে ভালোবাসতে পারে। এই ভালোবাসা আমি মানুষের কাছে পেয়েছি।’
‘‘আশি বছর বয়স বাঙালির জন্য অনেক বেশি। গড় আয়ু যখন খুব কম ছিলো তখন মানুষ পঞ্চাশের বেশি উপড়ে যেতো না। একালের মানুষ আশিতে পৌঁছে গেলাম, বুঝতেই পারলাম না যে জীবনটা কিভাবে অতিক্রান্ত হয়ে গেলো। যারা আমাকে এভাবে ভালোবাসা উপহার দিলেন তাদের প্রতিও থাকবে আমার ভালোবাসা।’’
অনুষ্ঠানে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন হাসান আজিজুল হক সম্পর্কে বলেন, রাজশাহী শহরটি বাংলাদেশের রাজধানী থেকে অনেক দূরে অবস্থিত। হাসান আজিজুল হক চাইলে রাজশাহীর চেয়েও অনেক নামি শহরে গিয়ে নিজেকে আরও বড় জায়গায় রাখতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। তিনি এখানে থেকেই রাজশাহীকে বিশ্বব্যাপী সম্মানিত করেছেন।
এসময় রাজশাহী-৩ আসনের সাংসদ আয়েন উদ্দিন বলেন, সংসদ সদস্য হিসেবে নয়, হাসান স্যারের একজন ছাত্র হিসেবে মনে করি তিনি তার লেখনির মধ্যদিয়ে মানুষের মনে যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকবেন।
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা, চৌধুরী মো. জাকারিয়া, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক সাইদুর রহমান খান, অধ্যাপক মিজানউদ্দীন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ইমেরিটাস অরুণ কুমার বসাক, পুন্ড্র বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মোকলেসুর রহমান, কবি জুলফিকার মতিন, ভাষাসৈনিক মোশাররফ হোসেন আকুঞ্জি, কবিকুঞ্জের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল হক কুমার শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে রাবির ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক স্বরোচিষ সরকার, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা সাজ্জাদ বকুলসহ রাজশাহীর গুণি ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামের সম্ভান্ত্র এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন বরেণ্য কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। তার পঞ্চাশটিরও বেশি কবিতা, ছোটগল্প ও উপন্যাস রয়েছে।