চ্যানেল আই কার্যালয় সকাল থেকেই ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। রাখা হয়েছে লাল গালিচাও। উদ্দেশ্য আজ চলচ্চিত্রের দুই অভিনয়শিল্পীর জন্মদিন পালন। আর বরাবরেও মতো এবারও শিল্পীদের সম্মান জানানোর জন্য প্রস্তুত চ্যানেল আই পরিবার। তাঁদের একজন আর কেউ নন, চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান আর অন্যজন চিত্রনায়িকা পপি। আজ রবিবার ‘তারকা কথন’ অনুষ্ঠানের মধ্যমণি ছিলেন তাঁরা।
সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা আর গলায় মাফলার ছিল শামসুজ্জামানের পরনে। অন্যদিকে লাল গাউন পরে লাল গালিচায় হেঁটে অনুষ্ঠানের সেটে হাজির হোন পপি। তাঁদের নিয়েই হবে আজকের আড্ডা। তবে তাঁরা একা নন। তাঁদের সঙ্গী হয়ে এসেছেন শিল্পী সমিতির সভাপতি ও চলচ্চিত্র খল অভিনেতা মিশা সওদাগর, পরিচালক ও অভিনেতা সালাউদ্দিন লাভলু এবং চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি ও নির্মাতা মুশফিকুর রহমান গুলজার।
একই দিনে জন্মদিন এই দুই শিল্পীর। তবে সালটা ভিন্ন। ১৯৪১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর জন্ম জনপ্রিয় অভিনেতা, পরিচালক, কাহিনীকার, চিত্রনাট্যকার, সংলাপ রচয়িতা ও গল্পকার শামসুজ্জামানের। আর ১৯৭৯ সালের এই দিনে জন্ম জনপ্রিয় মডেল ও অভিনেত্রী পপির।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা ও সম্মান জানানো হয় শামসুজ্জামানকে। একটি করে বছর যাচ্ছে আর বয়সের পাল্লাও ভারী হচ্ছে। তাই দিনটি তিনি কীভাবে উদযাপন করেন তা জানার ইচ্ছে থেকেই প্রশ্ন করা হয় তাঁকে। সোজা উত্তরে তিনি বলেন, ‘সব সময় ভালো থাকি। অসুস্থ বা কোনো অসুবিধা থাকলেও আমি ভালো থাকার চেষ্টা করি। আমি পুরোপুরিভাবে আল্লাহ’র উপর নির্ভরশীল। তাই ভয় পাইনা। আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভালো থাকব।’
চলছে আড্ডা। এরই মাঝে উপস্থিত চিত্রনায়িকা পপি। তাঁর উপস্থিতি অনুষ্ঠানের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিল দ্বিগুণ। জন্মদিনের শুভেচ্ছা তাঁরও পাওনা। তাই সবাই তাঁকে জানালো শুভেচ্ছা। তবে এটিএম শামসুজ্জামান একটু ভিন্নভাবেই জানালেন তাঁর মনের কথা। একটি গোলাপ দিয়ে পপিকে তিনি বলেন, ‘তোমার জন্য গোলাপ। তুমি নিজেই তো একটা গোলাপ। তাই গোলাপের জন্য গোলাপ উপহার।’
শামসুজ্জামানের উপহারের প্রতি সম্মান জানিয়ে পপি বলেন, ‘তাঁর মতো গুণী শিল্পীর জন্মদিন আর আমার জন্মদিন একই দিনে এটা আসলেই অনেক বড় পাওয়া।’
আড্ডা চলাকালে খুনসুটিতে মেতে উঠে পুরো টিম। তবে এক পর্যায়ে শামসুজ্জামান এক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে হয়ে পরেন স্মৃতিকাতর। তাঁর সবচেয়ে কাছের মানুষটির কথা জানতে চাওয়াতে শামসুজ্জামান অশ্রুকাতর হয়ে বলেন, ‘রাজ্জাক ছিল আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। তিনি এই চলচ্চিত্রের জন্য মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লড়ে গেছেন। তাঁর মতো একজন অভিনেতা কিন্তু একজনই থাকবে আজীবন।’
তবে অনুষ্ঠানের একটি ফোন কল আবারও আনন্দদিনের সতেজ ফিরিয়ে আনে। ফোনটি ছিল অভিনেত্রী দিলারা জামানের। তিনিও খুবই কাছের মানুষ এটিএম শামসুজ্জামানের।
তবে দিনটি যখন জন্মদিনের তখন কেক কাটা হবে না তা কিন্তু হয় না। তাই পরিশেষে এটিএম শামসুজ্জামান কেক কেটে চ্যানেল আই পরিবারকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেষ করেন অনুষ্ঠান।
এটিএম শামসুজ্জামান চলচ্চিত্র জীবন শুরু হয় ১৯৬১ সালে পরিচালক উদয়ন চৌধুরীর ‘বিষকন্যা’ ছবিতে সহকারি পরিচালক হিসেবে। এরপর অভিনেতা, চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক হিসেবেও নিজের প্রতিভার বিকাশ ঘটান। অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন পাঁচবার। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদকসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি।
এদিকে ১৯৯৭ সালে মনতাজুর রহমান আকবরের ‘কুলি’ ছায়াছবিতে অভিনয়ের মধ্যদিয়ে চলচ্চিত্রে আবির্ভূত হন পপি। এ পর্যন্ত তিনি ‘মেঘের কোলে রোদ’, ‘কি যাদু করিলা’, ‘গঙ্গাযাত্রা’ ছায়াছবিতে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুস্কাররে ভূষিত হয়েছেন।