টিমের নাম ছাড়া বলতে গেলে থাইল্যান্ডের থাম লুয়াং নাং নন গুহায় আটকা পড়া ১২ কিশোর ফুটবলার ও তাদের কোচ সম্পর্কে আর কোনো পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। প্রায় দুই সপ্তাহ পর গুহা থেকে ৯ জনকে উদ্ধারের পর তাদের সম্পর্কে কিছু কিছু তথ্য প্রকাশিত হয়েছে অান্তর্জাতিক গণমাধ্যমে।
টানা ৯ দিনের চেষ্টায় তাদের কাছে পৌঁছানোর আরও ৬ দিন পর রোববার ও সোমবার অভিযান চালিয়ে এই ৮ জনকে উদ্ধার করা হয়। কোচসহ বাকি ৫ জনের মধ্যে মঙ্গলবার তৃতীয় দফায় অভিযান শুরুর পর আরেকজনকে উদ্ধার করা হয় ।
সম্প্রতি তাদের নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত অল্প কিছু তথ্য এরকম:
চানিন ভিবুলরুংগ্রুয়াং (ডাকনাম: টাইটান), ১১ বছর
এই ছেলেটি আটকে পড়া দলের সবচেয়ে ছোট সদস্য। ৭ বছর বয়স থেকে তার ফুটবলে হাতেখড়ি। তারপর যোগ দেয় স্কুলের স্পোর্টস ক্লাবে। পরে মু পা ফুটবল ক্লাবে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
পানুমাস সাংদি (ডাকনাম: মিগ), ১৩ বছর
ফুটবল দলটির হেড কোচ নোপ্পারাত কান্তাওয়াংয়ের মতে, মিগ তার বয়সী অন্য ছেলেদের চেয়ে বেশ বড়সড়। কিন্তু তারপরেও সে যথেষ্ট ক্ষিপ্র।
দুগানপেট প্রোমতেপ (ডাকনাম: দোম), ১৩ বছর
মু প ‘র অধিনায়ক এই কিশোর। থাইল্যান্ডের অনেক পেশাদার ফুটবল ক্লাবই দলে টানার জন্য তার পেছনে ঘুরঘুর করে বলে জানা গেছে।
বিবিসি’কে নোপ্পারাত জানান, দোম একজন মোটিভেটর। ফুটবলে দক্ষতার জন্য তাকে দলের সবাই শ্রদ্ধার চোখে দেখে। ‘খেলার মাঠে সবসময়ই এরকম একজন অধিনায়ক দরকার। কারণ সব সমস্যা সমাধানের জন্য যখন তখন কোচ হস্তক্ষেপ করতে পারেন না,’ বলেন তিনি।
আদুল সাম-অন, ১৪ বছর
মিয়ানমারের স্বায়ত্তশাসিত ওয়া রাজ্যে জন্ম হয়েছিল আদুলের। শিক্ষা গ্রহণের ভালো সুযোগের আশায় পরিবার ছেড়ে সে থাইল্যান্ডে চলে আসে।
আদুল থাই, বার্মিজ, চীনা ও ইংরেজি ভাষায় কথা বলতে পারে। ব্রিটিশ ডুবুরির দল গুহার ভেতরে দলটিকে খুঁজে পাওয়ার পর একমাত্র সে-ই তাদের সঙ্গে কথাবার্তা চালাতে পেরেছে।
বাবা-মাকে লেখা চিঠিতে সে তাদের মুখ দেখতে চেয়েছে। কিন্তু তাদের দুশ্চিন্তা করতেও মানা করেছে আদুল।
সোমেপং যাইওয়াং (ডাকনাম: পং), ১৩ বছর
পংয়ের শিক্ষক মানুতসানুন কুনতুন এএফপি’কে জানান, পং খুবই হাসিখুশি ছেলে। সে শুধু ফুটবল না, সব খেলাই খুব পছন্দ করে। বড় হয়ে পং থাই জাতীয় দলের ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখে।
মোংকল বুনইয়াম (ডাকনাম: মার্ক), ১৪ বছর
মার্ক তার শিক্ষকদের দৃষ্টিতে ‘খুবই শ্রদ্ধাশীল ও ভালো ছেলে’। তার বাবা থিন্নাকর্ন বুনপিয়েমের ভাষায়, মার্ক একজন ভালো ছেলে, যে কিনা ফুটবল খেলার মতোই লেখাপড়া করতে ভালোবাসে।
নাত্তাওয়াত তাকামরং (ডাকনাম: টার্ন), ১৪ বছর
বাবা–মাকে লেখা চিঠিতে টার্ন তাদেরকে দুশ্চিন্তা করতে মানা করেছিল। অন্যদিকে বাবা–মা চিঠিতে লিখেছিলেন, তারা টার্নের ওপর রাগ করে নেই। তাকে ফিরে পেতে গুহার মুখেই অপেক্ষা করবেন তারা।
পিরাপাত সোমপিয়াংজাই (ডাকনাম: নাইট), ১৭ বছর
২৩ জুন নাইটের জন্মদিন ছিল। সেদিনই নিখোঁজ হয় সে। তার বাবা-মা এখনো সেই জন্মদিনের পার্টি আয়োজনের অপেক্ষায় আছেন।
স্থানীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুসারে, নাইটের জন্মদিন উদযাপনের উদ্দেশ্যেই ওইদিন গুহায় ঢুকেছিল দলটি। সঙ্গে করে এজন্য নানা রকম স্ন্যাকসও নিয়ে গিয়েছিল তারা।
আর এই অতিরিক্ত খাবারদাবারই তাদেরকে ৯টা দিন কোনোভাবে টিকে থাকতে সাহায্য করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
একারাত ওয়াংসুকচান (ডাকনাম: বিউ), ১৪ বছর
গুহায় বন্দী অবস্থায় মায়ের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিল বিউ। চিঠিতে সে লিখেছিল, গুহা থেকে বের হতে পারলে দোকান চালানোর কাজে মাকে অবশ্যই সাহায্য করবে।
প্রাজাক সুথাম (ডাকনাম: নোটে), ১৫ বছর
পরিবারের সদস্য আর বন্ধুদের ভাষায়, নোটে যথেষ্ট স্মার্ট ও বুদ্ধিমান। কিন্তু সে একটু চুপচাপ ধরনের বলেও জানিয়েছে তারা।
পিপাত ফো (ডাকনাম: নিক), ১৫ বছর
গুহায় আটকে থাকা অবস্থায় চিঠিতে বাবা-মায়ের কাছে খাবারের আব্দার করেছিল নিক। বলেছিল, গুহা থেকে বের হওয়ার পর সে মুকাঠা (থাই বার-বি-কিউ) আয়োজন করতে চায়।
পোর্নচাই কামলুয়াং (ডাকনাম: টি), ১৬ বছর
বাবা-মাকে লেখা চিঠিতে টি স্পষ্ট করেই লিখেছিল: দুশ্চিন্তা করো না। আমি খুব ভালো আছি।
সহকারি কোচ এক্কাপল চান্তাওয়াং (ডাকনাম: আকে), ২৫ বছর
আকের জন্মও হয়েছিল মিয়ানমারে। থুক ছোটবেলায় বাবা-মাকে হারিয়েছিলেন তিনি।
ফুটবল কোচ হওয়ার আগে বেশ কয়েক বছর বৌদ্ধ মংক হিসেবে জীবন কাটান তিনি। তখনই শিখেছিলেন কীভাবে নড়াচড়া কমিয়ে এবং ধ্যান করে দেহে শক্তি সঞ্চয় করা যায়। স্থানীয় গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, এসব কৌশল ফুটবল টিমের ক্ষুদে ফুটবলারদেরকেও শিখিয়েছেন তিনি।
গুহা থেকে চিঠি লিখে আকে কিশোরদের পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন এবং কথা দিয়েছিলেন সাধ্যমতো ছেলেদের খেয়াল রাখবেন তিনি। অবশ্য অনেকেই জবাবে জানিয়েছিলেন, তারা তাকে দোষ দেন না।
গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ডুবুরিরা যখন দলটিকে খুঁজে পেয়েছিল তখন আকেই ছিলেন সবচেয়ে বেশি দুর্বল। কারণ তিনি নিজের ভাগের খাবার না খেয়ে বাচ্চাদের খেতে দিয়েছেন খুঁজে পাওয়ার আগ পর্যন্ত।
এজন্যই উদ্ধার অভিযানে প্রথমে বলা হয়েছিল আকেকে বের করে আনার কথা। তখনও আকে সবার শেষে বের হওয়ার সিদ্ধান্ত জানান।
ফুপু আর দাদীকে লেখা চিঠিতে তিনি অবশ্য দুশ্চিন্তা করতে মানা করেছেন। কিছু ভালো ভালো খাবারের আব্দার জানিয়ে বলেছেন, এসব যেন তৈরি রাখা হয়। গুহা থেকে বাসায় ফিরে সেসব খাবেন তিনি।