পৃথিবীতে জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়া একটি ভয়ংকর বিষয়। কিন্তু অন্যদিকে ইতালির একটি গ্রামে জনসংখ্যা কমে যাওয়া ছিল বড় সমস্যা। ১৯৮০ সালের ২৩ নভেম্বর ইতালির ল্যাভিয়ানো গ্রামে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাতে বহু মানুষ নিহত হয়। ল্যাভিয়ানোর তৎকালীন মেয়র রোকো ফ্যাভিলেনা ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি দেখে বলেন এই গ্রামে নিহতের সংখ্যা প্রায় ২০ শতাংশ। ভূমিকম্পের ভয়াবহতা এমন ছিল যে গ্রামটির সর্বত্রই ছিল লাশ। সেখানকার জনগণ সারাদিন ব্যস্ত ছিল তাদের সমাহিত করতে। সেই ভয়াবহতার কারণে সেখানে কোন মানুষ বসবাস করতে চাচ্ছিল না। মেয়র ভাবতে শুরু করেন কিভাবে সেই গ্রামের জনসংখ্যা বৃদ্ধি করা যায় এবং ক্ষতি মোকাবেলা করা যায়। ভয়াবহতা পরবর্তী প্রজন্মের উপর বিধ্বংসী প্রভাব ফেলতে পারে এমনটাই ধারণাছিল। কারণ সেই বছর মাত্র ৪ জন শিশুর জন্ম হয়, যা ছিল এক ধরণের সতর্ক সংকেত। ভয়াবহতা মোকাবেলার জন্য মেয়র একটি পরিকল্পনা করেন। সেই গ্রামের প্রতিটি দম্পতিকে একজন নতুন শিশু জন্মের জন্য ১0 হজার ইউরো পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দেন। তার এই পরিকল্পনাটি অনেক জনপ্রিয় হয়েছিল, যাকে বলা হতো বেবি বোনাস। কিন্তু একটি শর্ত দেওয়াছিল, জন্মগ্রহণকারী শিশুর মা-বাবাকে ল্যাভিয়ানোর স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা এবং ভবিষৎ শিক্ষিত প্রজন্ম গড়ে তোলাই এই ভাতা প্রদান মূল লক্ষ্য। মাত্র চার বছর এই বেবি বোনাস দেওয়া হয়েছিল যার ফলশ্রুতিতে শিশু জন্মের হার বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু গত সাত-আট বছর ধরে ল্যাভিয়ানো গ্রামের জনসংখ্যা আবারও কমছে। কারণ অনেকে বাইরে পড়তে ও কাজের সন্ধানে যাচ্ছে এবং সেখানেই থেকে যাচ্ছে আর ফিরে আসছে না। এত কিছুর পরও সেই বেবি বোনাস ছিল একটি প্রজন্মের বেড়ে ওঠার ভবিষৎ পরিকল্পনা। সেখানে বেড়ে ওঠা শিশুরা যেন ল্যাভিয়ানো গ্রাম ও দেশের জন্য কিছু করতে পারে।