চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

জনপ্রিয় ইসলামিক বন্ড ‘সুকুক’ কার্যক্রমে পিছিয়ে বাংলাদেশ

বিআইবিএমের গবেষণা প্রতিবেদন

সারাবিশ্বে ইসলামিক বন্ড হিসেবে ‘সুকুক’ খুবই জনপ্রিয় হলেও বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো এক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। দেশের ৮টি পূর্ণ ইসলামিক ব্যাংক এবং ১৭টি ব্যাংকের ইসলামিক ব্যাংকিং উইন্ডো থাকলেও এখন পর্যন্ত সুকুক চালু হয়নি। এছাড়া ইসলামিক ব্যাকিংয়ের অধিকাংশ পরিমাপকে পিছনের সারিতে রয়েছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ ইনিস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

বুধবার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে ‘প্রডাক্ট ডাইভারসিফিকেশন অব ইসলামিক ব্যাংকস: প্রসপেক্টস অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উপস্থাপন করা হয়।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মো. আলমগীর।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে ইসলামিক বন্ড ‘সুকুক’ খুব জনপ্রিয়। কিন্তু এ বন্ডে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। তবে ভিন্ন নামে ইসলামিক বন্ড চালু থাকলেও তাতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না গ্রাহকরা। সুকুক হলো- সম্পদের ওপর মালিকানা প্রদানের নিশ্চয়তা প্রদানকারী বিনিয়োগ সার্টিফিকেট। এটি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় সৌদি আরবে। এর মোট শেয়ারের প্রায় ৩৯ শতাংশ তাদের দখলে। দ্বিতীয় অবস্থানে মালয়েশিয়া। সেখানে সুকুকের প্রায় ৩৩ শতাংশ তাদের দখলে।

এরপরে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া, কাতার, ওমান, তুরস্ক, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তান, হংকং, নাইজেরিয়া, ব্রুনাই, জর্ডান। বাংলাদেশের অবস্থান ১৪ নম্বরে। মাত্র দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ ইসলামিক বন্ডের শেয়ার আছে বাংলাদেশের।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এবং বিআইবিএম নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, ইসলামিক ব্যাংকিং এখন বাংলাদেশের মূল ধারার ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে গেছে। বর্তমানে ৮ টি ইসলামিক ব্যাংক গ্রাহকদের সেবা দিচ্ছে। একই সঙ্গে সাধারণ ব্যাংকিংয়ের ১৭ টি উইন্ডো ইসলামিক ব্যাংকিং সংক্রান্ত সেবা দিচ্ছে। টেকসই আর্থিক ব্যবস্থাপনা তৈরি করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের প্রসারে কাজ করছে।

তিনি বলেন, সারাবিশ্বে সুকুক বন্ড খুবই জনপ্রিয়। কিন্তু বাংলাদেশে পিছিয়ে পড়েছে। কীভাবে চালু করলে এ বন্ডটি জনপ্রিয় হবে তা জানতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল বিভিন্ন দেশে ঘুরেছে।

বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক এবং পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, ব্যাংকিং খাতের মোট শেয়ারের ২২ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে ইসলামী ব্যাংকংগুলো। তবে এ বড় শেয়ারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পর্যাপ্ত প্রডাক্ট নেই। ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের ঝুঁকি কমাতে ছোট ছোট ঋণ দেয়ার জন্য সেই ধরণের বহুমুখী প্রডাক্ট তৈরির ওপর জোর দেন তিনি।

ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ইসলামিক ব্যাংকিংয়ে ঝুঁকি কমাতে প্রডাক্টের বৈচিত্র্য আনা প্রয়োজন। বড় ধরণের ঋণের সাথে ছোট ছোট ঋণ দিয়ে ব্যাংকের ঝুঁকি কমানোর ওপর তিনি জোরারোপ করেন। তারল্য ব্যবস্থাপনার জন্য সুকুকের প্রবর্তন জরুরী বলে মনে করে তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি বলেন, প্রচলিত ব্যাংকের সঙ্গে ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে হবে। এজন্য সেবায় বৈচিত্র্য আনতে হবে।

সমাপনী বক্তব্যে বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী বলেন, ইসলামিক ব্যাকিং খাতে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নতুন নতুন ইসলামিক পণ্য তৈরি করতে হবে। যা গ্রাহকদের কাছে জনপ্রিয় করতে পারলে ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকি কমে যাবে। তিনি সাধারণ ব্যাংকিং এবং ইসলামিক ব্যাংকিংকে একে অপরের পরিপূরক হিসেবে বিবেচনা করার পরামর্শ দেন।