ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন শেষে আগামী তিন বছরের জন্য দল পরিচালনায় নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়েছে। সেখানে প্রত্যাশিতভাবেই বর্তমান সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই একই পদে পুনর্নির্বাচিত করা হয়েছে। নানা রকম জল্পনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদক পদেও কোনো পরিবর্তন আসেনি। আবারো সেই দায়িত্ব পেয়েছেন ওবায়দুল কাদেরই।
এর বাইরে দলের সভাপতিমণ্ডলী ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের সব কটি পদে নেতা নির্বাচন করা হয়েছে। নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সাংগঠনিক সম্পাদক পদেও। বলতে গেলে অল্প সামান্যই পরিবর্তন এসেছে নতুন কমিটিতে। তবে শুদ্ধি অভিযানসহ নানা কারণে রাজনৈতিক মহলের ধারণা ছিল – বড় রকমের পরির্বতন আসছে আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।
নতুন কমিটির সভাপতিমণ্ডলীতে জায়গা পেয়েছেন পরিবহন শ্রমিক নেতা ও সাবেকমন্ত্রী শাজাহান খান। তাকে নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। সেই বিতর্ক শুধু যে দলের বাইরে, তা নয়। আওয়ামী লীগের ভেতরে তার কর্মকাণ্ডের সমালোচনা আছে। তাকে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে আনায় নিশ্চিত করেই বলা যায়, সেই সমালোচনা আরও বাড়বে। তার চেয়ে আরও গ্রহণযোগ্য অনেক নেতাকে সভাপতিমণ্ডলীতে দেখতে চেয়েছিলেন দলের নেতাকর্মীরা। তারপরও শাজাহানকে কমিটিতে রাখা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে কাউন্সিল অধিবেশনের শুরুতে শনিবার দলের সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা কঠিন হলেও কিছু সত্য কথা বলেছেন। তার ভাষায় ‘আদর্শভিত্তিক রাজনীতির মাধ্যমে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনের পাশাপাশি সংগঠনকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে। যাতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করে।’
তিনি সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছেন নেতাকর্মীদেরকে ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়া পরিহার করতে। শেখ হাসিনা মনে করেন, ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে না উঠতে পারলে দেশের জন্য কাজ করা যায় না। আর এ জন্যই অনেকেই ক্ষমতায় আসার পর জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারে না। তাই সবাইকে এই চিন্তা থেকেই কাজ করতে হবে।’
আমরা অনেক ক্ষেত্রে দেখেছি, দলীয় প্রধানের এমন কঠিন সত্যকে অবজ্ঞা করে ‘পাতিনেতা’ থেকে শুরু করে ‘হাইব্রিডনেতা’ নিজেদের মতো ক্ষমতার বলয় তৈরি করে জনগণ ও দলীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করে। আর তাতেই দল ও দলীয় নেতৃত্বকে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। এদেরকে শক্ত হাতে দমন করতে হবে। আগামীতে আমরা সেটাই দেখতে চাই।