বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ। এদেশের মানুষ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কথায় প্রভাবিত হয়। সুতরাং ধর্মীয় জঙ্গিবাদের ব্যাপারে মসজিদ-মাদ্রাসা প্রধানদের ভূমিকা অপরিসীম। এই কথা বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী ইমামদের সম্মেলনে তাদেরকে জঙ্গিবাদ নিয়ে জনগনকে সচেতন করার কথা বলেছেন। ইমামদের ভূমিকা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইমামরা সাধারণ মানুষকে এটা ভালোভাবে বোঝালে দেশ থেকে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ সম্পূর্ণভাবে দূর করা সম্ভব হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে যুগ যুগ ধরে এটাই প্রচলিত যে, সবাই যার যার ধর্ম পালন করবে। ইসলামে বলা হয়েছে, আল্লাহ রব্বুল আ’লামীনই শেষ বিচার করবেন। তাহলে মানুষ খুন করে, সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী কাজ করে কীভাবে তারা (সন্ত্রাসীরা) ইসলামে বিশ্বাস করে? কেউ সৎপথে থাকলে সে বিচার আল্লাহ করবেন, কেউ ভুল পথে থাকলে সে বিচারও তিনিই করবেন – এ বিশ্বাসটা কেন আমরা রাখতে পারি না? কেন বিশ্বাস হারিয়ে নিজেরাই মানুষকে খুন করাটা ধর্মের নামে নিজের হাতে তুলে নেই? গত এক দশক ধরে বিশ্বব্যাপী ধর্মীয় সন্ত্রাস এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এক্ষেত্রে ইসলামী জঙ্গিবাদ সারা বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষের ঘুম হারাম করে তুলেছে। বাংলাদেশে এই জঙ্গিবাদ বিগত জোট সরকারের আমলে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। প্রথমদিকে বাংলা ভাই নামক এক সন্ত্রাসী ইসলামী আইন বাস্তবায়ন করার নামে নিজ হাতে আইন তুলে নিয়ে নিরীহ মানুষ ও সংখালঘুদেরকে নির্যাতন করত। এরপর শুধু এই একটি দল বা গোষ্ঠী নয়, সারাদেশে বিভিন্ন দল বা গোষ্ঠীর নামে জঙ্গি গোষ্ঠীর উদ্ভব ঘটে। যারা এই জঙ্গিবাদের ধুয়া তুলে দেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলো তাদের প্রায় সবাই ছিলো ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত। দেশের মাদ্রাসাগুলোতে পাঠ্যক্রমের নানা সীমাবদ্ধতার কারণে জঙ্গিবাদের প্রসার ঘটেছে। তবে, সর্বশেষ হলি আর্টিজানের ঘটনায় সাধারণ ও ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া তরুণরাও জড়িত ছিল। মানে জঙ্গিবাদের বিস্তার সর্বব্যাপী। ইসলামে জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই এই কথা স্মরণ করিয়ে প্রধানমন্ত্রী ইমামদের কাছে তাদেরকে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার আহবান জানান। আমরা আশা করি, এই দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষেরা ইমামদের মাধ্যমে সচেতন হয়ে ধর্মীয় জঙ্গিবাদকে প্রতিহত করবে যার যার অবস্থান থেকে। আমরা অারো আশা করবো, ইসলামের শান্তির বাণী জনগণকে অনুধাবন করানোর জন্য ইমাম সম্প্রদায় বিশেষ উদ্যোগ নেবেন এবং এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে জঙ্গিবাদকে নিরুৎসাহিত করে দেশকে জঙ্গিবাদ মুক্ত একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি বিশ্বব্যাপী তুলে ধরবেন।