প্রতিষ্ঠার একযুগ পেরিয়ে গেলেও এখনো খাওয়ার পরিবেশ উপযোগী হয়ে উঠতে পারেনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ক্যাফেটেরিয়া। তা এখন নানান সমস্যায় জর্জরিত। মানসম্পন্ন খাবারের অভাবে শিক্ষার্থীরা নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে বাইরের হোটেলের উপর।
সোমবার ক্যাফেটেরিয়ায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে টানানো হয়েছে খাবারের নতুন তালিকা। এতে ভাত, ডাল, ভর্তা, মাছ ও মুরগির উল্লেখ রয়েছে। তালিকায় খাবারের দাম রাখা হয়েছে সর্বোচ্চ ৪৫ টাকা এবং সর্বনিম্ন ২৫ টাকা।
অবশ্য ক্যাফেটেরিয়ায় টেবিল-চেয়ার না থাকায় খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে বেঞ্চে। অনেক দিন ধরে পানির ফিল্টার নষ্ট থাকায় বিশুদ্ধ পানি পান করতে পারছে না শিক্ষার্থীরা।
তাদের অভিযোগ, অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে ২০ টাকায় মুরগি, ডাল- ভাত, ভর্তা পাওয়া যায়; সেখানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫ টাকায় ভাত-ডাল, ভর্তা পাওয়া যায় মাত্র। তার মধ্যে আবার খাবারের মান খারাপ খুবই। আর বিশুদ্ধ পানির কোনো ব্যবস্থাই নেই। নেই বসার জায়গাও।
ক্যাফেটেরিয়ায় খাবার উপযোগী পরিবেশ ও সাশ্রয়ী মূল্যে ভালো মানের খাবার সরবরাহের দাবি জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী জ্যোতি আক্তার চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘খাবারের মান ভালো না। খাবারে কোনো স্বাদ পাই না। বাঁচার জন্য খাচ্ছি এই আর কি!’
আরেকজন শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের এমনিতেই হল নেই, তার মধ্যে আবার ক্যান্টিনে ভালো মানের খাবারের ব্যবস্থা নেই। সকালে ক্লাস থাকায় বেশির ভাগ দিন না খেয়ে ক্যাম্পাসে আসতে হয়। তবে ক্যাফেটেরিয়ায় খাওয়ার চেয়ে না খেয়ে থাকাই ভালো।
ইশরাত জাহান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘আজ খেতে বসে ডাল নিলাম, কোনো স্বাদ পাইনি। ভর্তা চেয়েছি, তার বদলে দিয়েছে চাটনি। ক্যাফেটেরিয়ায় চাহিদা অনুযায়ী খাবার কম। দেড়টার পরে আসলে খাবারও পাই না। বলে দেয় খাবার নেই।’
খাবারের দাম কমানো উচিৎ জানিয়ে তৌহিদুর রহমান নামের শিক্ষার্থী বলেন, ‘এখানে খাবারের অবস্থা খুব খারাপ। শাঁখারী বাজার এলাকায় একই দামে এর চেয়েও ভালো মানের খাবার পাই। ওখানকার খাবারের মতো স্বাদ এখানকার খাবারে পাই না। দাম আরো কমানো উচিত। দাম না কমালে, খাবারের মান আরো ভালো করতে হবে।’
ক্যাফেটেরিয়ার দায়িত্বে থাকা রাজু আহমেদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘বিভিন্ন সংগঠনগুলো জোর করে ক্যাফেটেরিয়ার বেঞ্চ নিয়ে যায়। ছেলেরা ক্যাম্পাসে ঝগড়া করে চেয়ার-টেবিল ভেঙ্গে ফেলেছে। বাধা দিলেও তারা মানে না।’
‘‘বসার জায়গা না থাকায় শিক্ষার্থীরা খেতে আসছে না। বেঞ্চ বানিয়ে দেওয়ার জন্য ভিসি স্যারের কাছে আবেদন করেছি, দেখি কি হয়। ফিল্টার ঠিক করে দেওয়ার জন্য প্রশাসনকে বলেছি। প্রশাসন বলছে, ঠিক করে দিবে। তারপর চেষ্টা করছি ভাল মানের খাবার সাপ্লাই দেওয়ার।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক ড. মোহাম্মদ আব্দুল বাকী বলেন, ‘আমরা এমন একটা ব্যবস্থা নিতে চাই, যাতে ক্যাফেটেরিয়ার চেয়ার-টেবিল ক্যাফেটেরিয়ায় রাখতে পারি। আশা করি দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারবো।’
‘‘সংগঠনগুলোর জন্যও আলাদা করে চেয়ার-টেবিল রাখব, যাতে তারা তাদের কাজে লাগাতে পারে। এখন ঠাণ্ডার সময় তাই ফ্যানগুলো রিপ্লেস করা হচ্ছে না। গরম আসার আগেই আমরা তা রিপ্লেস করে ফেলব। পানির ফিল্টার ঠিক করার জন্য ক্যাফেটেরিয়া কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছি।’’
ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা নিয়মিত ক্যাফেটেরিয়ার খাবার তদারকি করি। আমরা চাই শিক্ষার্থীরা মানসম্মত খাবার পাক। খাবারে সমস্যা থাকলে শিক্ষার্থীরা যেন আমার কাছে নিয়ে আসে তাহলে আমি প্রমাণসহ ব্যবস্থা নিতে পারবো।’’