সম্প্রতি দেশে ধর্ষণের ঘটনা মারাত্নভাবে বেড়ে গেছে। একের পর এক খবরের কাগজে, সোস্যাল মিডিয়া চোখ রাখলেই ধষণের খবর চোখে পড়ে।
ভারতে নির্ভয়াকে চলন্ত বাসে একই কায়দায় ধর্ষণ করা হয়েছিলো, যেমনটি করা হয়েছে টাইঙ্গালের রুপার সঙ্গে। কয়েকদিন আগে নারায়নগঞ্জ চলন্ত ট্রাকে এক কিশোরীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করলো চালক-হেলপার। এর আগে রেইনট্রি, কুমিল্লা তনু হত্যা আমাদের বিবেকে নাড়া দিলেও অপরাধীরা এখনো বিচারের আত্ততায় খুব কম এসেছে।
পাশবিক ঘটনাগুলোর তীব্র ঘৃণা ও উদ্বেগ জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ফাহমিদুল হক তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন:
একটা বাসে নারী-পুরুষ কত যাত্রীই থাকে। বাসের ড্রাইভার-কর্মচারীরা লোক উঠায়-নামায়। এটাই তাদের কাজ। এটাই তাদের সেবা। বিনিময়ে তারা বেতন পায়। এভাবেই তারা সকাল সন্ধ্যা, কখনোবা রাত পার করে। কাজশেষে যে-যার গৃহে চলে যায়। কেউ স্ত্রী-সন্তানের কাছে, কেউ মা-ভাই-বোনদের কাছে। অন্য পাঁচটা মানুষের মতোই তারা খেটে খাওয়া বা পরিশ্রমী মানুষ। মানুষকে নিয়ম করে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়া কম পুণ্যের কাজ নয়। যেমন করে কৃষক অন্যের জন্য ফসল ফলায়, শ্রমিক অন্যের জন্য উৎপাদন করে। কিংবা শিক্ষক অন্যেক জ্ঞানের সূত্র ধরিয়ে দেয়। ব্যবসায়ী অন্যের জন্যই প্রয়োজনীয় দ্রব্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পৌঁছে দেয় বা দোকানে পসরা সাজায়। বাসের কর্মচারীর কাজ কম পুণ্যের নয়।
কিন্তু একদিন তারা অন্য মানুষ হয়ে যেতে পারে। একে একে যাত্রীরা নেমে গেল। হয়তো শেষ যাত্রী কোনো মেয়ে, কোনো তরুণী। আর কেউ নেই, মেয়েটি এবং বাসের কর্মচারীরা। সময় সন্ধ্যা কিংবা রাত। বাস একটা পরিসর, দেয়ালঘেরা পরিসর। এবার সেই খেটেখাওয়া পুণ্যবান সাধারণ কর্মচারীরাই পুরুষরূপে আবির্ভূত হয়। তাদের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা ধর্ষক জেগে ওঠে। কর্মচারী চার বা পাঁচজনেরেই এই রূপান্তর ঘটে। তারা কেবল চোখাচোখি করে নেয় একবার। তারা মানুষ থেকে দানবে রূপান্তরিত হয়।
ছোঁয়া পরিবহন থেকে রেইনট্রি হোটেল, প্রত্যেক স্থানেই ধর্ষকের চলাচল। তাদের বেশবাশ মানুষের, কিন্তু যেকোনো সামান্য অনুকূল পরিবেশ জুটে গেলে তারা ধর্ষকে রূপান্তরিত হয়।
কিছু মানুষ অবশ্য অনূকূল পরিবেশ পেলেও দণ্ডায়মান ধর্ষক সত্তাকে নিরস্ত্র করতে সমর্থ হয়। আমরা তাদের মানুষ বলি।
কিন্তু প্রত্যেক পুরুষমানুষই সম্ভাব্য ধর্ষক।