চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ইউনিয়নের সম্মেলনে গান গাওয়ার আগে ইউনিয়নের এক নেতার দ্বারা অশোভন আচরণের জন্য জলের গানের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি হাসান তারেক।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই নেতা সম্পর্কে জানতে চাইলে চ্যানেল আই অনলঅইনকে হাসান তারেক বলেন, কে বা কারা ওই এমন অশোভন ঘটনা ঘটিয়েছে তার খোঁজ নেয়া হচ্ছে।
এই ঘটনায় ছাত্র আন্দোলনের লড়াই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ঘটনাটির জন্য ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে আমরা জলের গানের কাছে আনুষ্ঠানিক ভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছি।
ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি বলেন, আমাদের মতো ব্যান্ড দল জলের গানও সাংস্কৃতিক লড়াই করে। ভবিষ্যতে আমরা তাদের পাশে চাইবো।
জলের গানের ভোকাল রাহুল আনন্দ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি হাসান তারেক আমাকে ফোন করে ঘটনাটি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, আমরা ঘটনাটি ভুলে গেছি, আমরা ওই ঘটনা ধরে বসে নেই।
গত বৃহস্পতিবার ছাত্র ইউনিয়নের আমন্ত্রণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গান গাইতে গিয়েছিল দেশের বর্তমান সময়ের আলোচিত ও জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘জলের গান’ আর সেখানে ছাত্র ইউনিয়নের এক কেন্দ্রীয় সংগঠকের কথায় অসম্মান বোধ করায় গান না গেয়েই অভিমান করে ঢাকায় ফিরে আসেন তারা।
জলের গানকে উদ্দেশ্য করে ওই নেতা বলেন, ‘জলের গানের হাতিগুলারে কী খাওয়াইছ’ এমন মন্তব্যে অস্মমানিত বোধ করে ব্যান্ড দলের সদস্যরা।
পরবর্তীতে ‘জলের গান’ তাদের ফেসবুকে গান না গাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে একটি পোস্ট দেয়। ‘জলেরগান অর্থ নিয়ে গান গায় আবার না নিয়েও গায়। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা সামাজিক সংগঠনগুলোর কাছ থেকে বেশীর ভাগ সময়ই পারিশ্রমিক নেয় না।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের সম্মেলন অনুষ্ঠানে গাওয়ার আমন্ত্রণটাও তেমনি বিনা পারিশ্রমিকে ছিল। চাহিদা ছিল পরিমাণ মতো সাউন্ড সিস্টেম (জায়গার আয়তন অনুযায়ী ৮ জোড়া) আর আসা-যাওয়ার ট্রেনের টিকেট।
যেহেতু দীর্ঘভ্রমণ শেষে বাজাতে হবে তাই ট্রেনের শীতাতপ শয়নকক্ষের বন্দোবস্ত চেয়েছিলাম। যদিও তা আমরাই ব্যবস্থা করে নিয়েছিলাম নিজেদের টাকায়। সবকিছুই ঠিকঠাক ছিলো। উষ্ণ অভ্যর্থনা, সকালের নাস্তা, সুন্দর আরামদায়ক অতিথিশালা সর্বোপরি সুন্দর বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গন। গেস্টহাউজেই দুপুরের খাবারের প্যাকেট। আমাদের চারজন সেখানেই লাঞ্চ করে।
বাকীরা কলাভবনের ঝুপরিতে ভাত খায়। ছাত্রছাত্রীদের সাথে আড্ডাবাজি করে সময় কাটায় কিছুক্ষণ। অতিথিশালায় অবস্থানরত বাকী সদস্যরা জানায় জলেরগানকে নিয়ে খারাপ মন্তব্য (“জলের গানের হাতিগুলারে কী খাওয়াইছ”) করেছেন সংগঠনের নেতৃস্থানীয় একজন। যিনি ঢাকা থেকে গিয়েছিলেন। এমনকি রসিকতা করতে পারেন তেমন সম্পর্কও তার সাথে আমাদের ছিলো না। সংগত কারণেই নাম উল্লেখ করছি না।
(সেখানে উপস্থিত অন্যান্য কেউ প্রতিবাদও করেননি। শুধুমাত্র বলেছেন এখানে জলের গানের লোক আছেন।) এমন মন্তব্য আমাদের আত্মমর্যাদায়, আত্মাভিমানে চরম আঘাত হানে। এযাবৎকাল যত জায়গায় গিয়েছি, গান গেয়েছি সবখানে আমাদের আচরণে সবাই খুশিই হয়েছেন। আমরা সবখানে যে কোনও ভাবে যেকোন পরিবেশে মিশে যেতে পারি বলে প্রশংসা বাক্যই শুনেছি। আমদের মন ভেঙে যায়। প্রচণ্ড অভিমান ভর করে।
এমন মানসিক অবস্থায় গান গাওয়া সমীচীন মনে করিনি। আমরা গাড়িতে উঠে বসি চলে যাওয়ার জন্য। ছাত্রছাত্রীরা আমাদের ঘিরে অনুরোধ করতে থাকে, অনর্গল কাঁদতে থাকে। আমদের ভেতরটাও কাঁপতে থাকে বোবাকান্নায়। একদিকে আত্মসম্মানবোধ আরেক দিকে দাঁড়িয়ে আছে ভালোবাসার কান্নায় ভেজা মুখগুলো। বলি ক’দিন পর না হয় আবার আসব এবার আমাদের ক্ষমা করেন। আমরা বিষয়টাকে অনেক চেষ্টা করেও মেনে নিতে পারছিলাম না। হয়তো ভুলই করে ফেলেছিলাম তৎক্ষণাত। ছুটে চলি শহরের দিকে।
পেছনে ফেলে যাই অনেক অনেক ভালোবাসা। আরও একবার ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি সবার কাছে। (পরের ঘটনাগুলো নিতান্তই তাদের রাগ থেকে করা। আমরা কিছুই মনে রাখছি না। কারণ তার দায় আমাদেরই। সে বিষয় নিয়ে সবার সাথে ভাগাভাগি করাটা একদমই শোভন নয়। এ লেখাটারও তেমন প্রয়োজন হতো না যদি পূর্ববর্তী স্ট্যাটাসে অনেকেই ভুল তথ্য দিয়ে মন্তব্য না করতেন।)’