প্রতিটি সংবাদপত্রেই ১২ জুলাই দিবাগত রাতের ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভার বাকবিতণ্ডার বিষয় ফলাও করে ছাপা হলো। ১৩ জুলাই একটি দৈনিকে শিরোনাম হলো: সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বিপুল অর্থের মালিক/একই পত্রিকার অনলাইন হেডলাইনে ঘুরে বেড়িয়েছে, বেপরোয়া ছাত্রলীগের উচ্ছৃংখল কর্মকাণ্ড।
১৩ জুলাই চ্যানেল আই অনলাইনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের শিরোনামে দেখা গেছে, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের বাকবিতণ্ডা গণতন্ত্র চর্চার জন্য সহায়ক/জানা গেছে এই সভায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের খোদ কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ ওঠে। উঠে আসে তাদের বিলাসবহুল জীবনযাত্রা ও অন্য নেতাদের বঞ্চিত থাকার চিত্র। বিভিন্ন অনৈতিক ভাগবাটোয়ারার ক্ষেত্রেও সতীর্থ নেতাদের বঞ্চিত করা হয়ে থাকে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগের সভার এই হট্টগোলকে গণতন্ত্র চর্চার সহায়ক বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি এ-ও বলেছেন, ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন।সংগঠনের বিষয়গুলো তারা নিজেরা বসেই ঠিক করবে। আমরাতো সেখানে হস্তক্ষেপ করতে পারিনা।যে ছাত্রলীগের রয়েছে অনেক ইতিহাস ঐতিহ্য। তারা ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে, ৬৯ এর আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে, একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে, স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে। সে ছাত্রলীগের এই করুণ অনাদর্শিক হাল হলো কেন?
তাদের বাকবিতণ্ডায় উঠে এসেছে আরও চমকপ্রদ তথ্য ছাত্রলীগ নেতাদের বাসাভাড়ার টাকা দেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক সায়েম খানের এই প্রতিবাদী ভূমিকা কি পুরস্কৃত হচ্ছে না তিরস্কৃত? তার প্রতিবাদের ধরনেতো ভাগ বাঁটোয়ারার প্রশ্নে ভাগ পাওয়া না পাওয়ার প্রশ্নও উঠে এসেছে।
তিনি প্রশ্ন ছুঁড়েছেন, আমার ভাগ কই? সুতরাং প্রশ্ন থেকে যায়, নিজের ভাগটা পেলে কি তিনি এ প্রতিবাদ করতেন? ছাত্রদের থাকার স্থান বিশ্ববিদ্যালয়ের হল অথচ ছাত্রনেতাদ্বয় ৫৫০০০ টাকায় ভাড়া বাসায় থাকছেন! কেন? তারা কতদিন ধরে থাকছেন? এই তথ্যটা কি মূলদলের নীতিনির্ধারকদের জানা ছিলনা? প্রধানমন্ত্রী কি সত্যিই বাসাভাড়ার টাকা দেন? দিলে কেন দেন নাকি দেননা ছাত্রলীগ নেতাদ্বয় মিথ্যাচার করেছেন?
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বাকবিতণ্ডায় তাদের নিজেদের মধ্যেও বৈষম্যের দিক সুস্পষ্ট হয়েছে। বঞ্চিত নেতৃত্বের প্রতিনিধি হিসাবে সায়েম খান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী দিলে এতে আমারও ভাগ আছে। আমিতো বাসাভাড়া নিয়ে থাকতে পারিনা। ওবায়দুল কাদের যতই বলুন, এই বাকবিতণ্ডা গণতন্ত্র চর্চার জন্য সহায়ক আসলে তা লজ্জাজনক। হয়তো তিনি যুক্তির খাতিরে এই যুক্তিটা দাঁড় করালেন মাত্র। ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সম্প্রতি বিবাহিতদের সংগঠন ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছিলেন। বিবাহিতরা কি তাদের চেয়ে দোষী? বিয়ে করলে ছাত্ররাজনীতির কী সমস্যা হয় এগুলোর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দরকার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানওতো ছাত্রজীবনেই বিয়ে করেছেন। বেগম ফজিলতুন্নেছা বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির সহায়কই হয়েছেন। আরও অনেক পোড় খাওয়া ছাত্রনেতাকে তাদের ছাত্রত্ব থাকাকালীন সময়েই বিবাহ করতে দেখা গেছে।বিবাহিতদের সংগঠন ছাড়ার নির্দেশের পিছনে প্রতিপক্ষ ছাঁটাইয়ের উদ্দেশ্য নিহিত ছিল কিনা সেটাও ভাববার নয় কি?
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভার বাকবিতণ্ডায় আরও উঠে আসে রাসেল টাওয়ারের নামে ভাগবাঁটোয়ারার বিষয়। আরও উঠে আসে নিজেদের মধ্যে ভাগবাঁটোয়ারা নিয়ে বৈষম্যের ক্ষোভ। সুতরাং যদি বলি, এবারের কেন্দ্রীয় সভায় ছাত্রলীগের রাজনৈতিক বস্ত্রহরণ ঘটেছে। তা কি খুব বেশি বলা হবে?
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)