চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

ছাত্রলীগকে ‘অলআউট’ নেমে যেতে ওবায়দুল কাদেরের আহ্বান

মতলবি মহল ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠনের পরিচিতি দেওয়ার চক্রান্ত করছে অভিযোগ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন: একটা মহল উঠে পড়ে লেগেছে, ছাত্রলীগকে কীভাবে অপদস্থ করা যায়। তোমাদের অলআউট নেমে যেতে হবে। ফেসবুকে অ্যাটাক চলছে, এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিক্ষক মিলনায়তন কেন্দ্র টিএসসিতে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৮৮তম জন্মবার্ষিকী স্মরণে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত এক ছাত্রী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

বেগম ফজিলাতুনন্নেছা মুজিবের স্মরণে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন: বঙ্গবন্ধু কখনও বঙ্গবন্ধু হতে পারতেন না, যদি না তার পাশে বেগম মুজিব থাকতেন। বঙ্গবন্ধু জেলে থাকলে পরিবারের দায়িত্বের পাশাপাশি ছাত্রলীগ-যুবলীগ-আওয়ামী লীগের সেতু বন্ধন ছিলেন তিনি। জেল থেকে নেতার সব নির্দেশনা তিনি এনে আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে পৌঁছে দিতে। তিনি নীরবে বিপ্লব করে গেছেন। কিন্তু কখনও প্রচারের আলোতে আসতে চাননি।

‘তিনি কখনও মরবেন না। সুনামগঞ্জ থেকে তেতুলিয়া সারাদেশে সকল প্রান্তের মানুষের স্মরণে তিনি বেঁচে আছেন। তিনি বাঙ্গালির দুর্যোগে নির্ভরযোগ্য বাতিঘর। বঙ্গবন্ধুর সকল প্রেরণার উৎস ছিলেন বেগম ফজিলানুন্নেছা মুজিব। ছাত্রলীগের কর্মীদের বলবো তোমরা যদি বেগম মুজিবের কাছ থেকে শিক্ষা নিতে পারো জীবনে বড় হতে পারবে। নারী হিসেবে যেমন বড় হতে পারবে, সহধর্মীনি হিসেবেও বড় হতে পারবে।’

দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি সর্ম্পকে কাদের বলেন: আমরা এখন চ্যালেঞ্জিং টাইম অতিক্রম করছি। আধার অতিক্রম করতে হলে ধৈর্য্য লাগবে, সহনশীলতা লাগবে। আগামীকাল ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্বের শুভ সূচনা হবে। নতুন নেতৃত্ব বটতলায় তার নিজস্বতা দেখাবে। সেখানে তারাই বক্তব্য রাখবে। কোন আওয়ামী লীগ নেতা সেখানে আসবে না। দেখা যাবে তারা কতোটা সক্ষম।

সাংবাদিকদের ওপর হামলায় ছাত্রলীগ জড়িত নয় দাবি করে কাদের বলে: সাংবাদিকদের ওপর ছাত্রলীগ আক্রমণ করেছে এমন তথ্য পেলে আমাকে দিন, নেত্রীর সঙ্গে কথা বলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেবো। প্রমাণ ছাড়া অপবাদ না দেওয়ার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাংগঠনিক এ নেতা।

তিনি বলেন: আমাদের পার্টি কোন অপকর্মকারীকে ক্ষমা করে না। অপরাধী যতোই প্রভাবশালী হোক শেখ হাসিনা কাউকে ছাড় দেন না। সাংবাদিকদের প্রতি অনুরোধ করবো ঢালাওভাবে অপবাদ দেবেন না৷

নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের সময় গুজব ছড়ানোর অভিযোগ গ্রেফতার হওয়া নওশাবা প্রসঙ্গে তিনি বলেন: কী এক নায়িকা আছেন! তার নাম আমি বলতে চাই না। আমি শুধু বলবো কী উদ্দেশ্যে সে এটা করেছে, সব বের করা হবে।

ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব প্রসঙ্গে বলেন: তিনমাস অনেক যাচাই বাছাই করে আমাদের নেত্রী ছাত্রলীগের নেতৃত্ব বাছাই করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে কোন সমালোচনা আমরা দেখিনি। অনেকে বলেছেন ল’ ডিপার্টমেন্ট থেকে অনেকে এসেছেন। তাতে সমস্যা কী? তারা কি ছাত্র নয়!

নতুন নেতৃত্বকে পূর্ণ কমিটিতে অনুপ্রবেশের ব্যাপারে সতর্ক করে কাদের বলেন: অনুপ্রবেশ যেন না ঘটে সেটা খেয়াল রাখতে হবে। কিছু আসে মৌসুমী পাখির মতো। এসব নবাগত অনুপ্রবেশকারীরা ছাত্রলীগের নামে খারাপ কাজ করে। অপকর্ম করে কয়েকজন, যার দায় পড়ে রুলিং পার্টির ওপর।

সদ্য বিদায়ী ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাধারণ সম্পাদকে স্মরণ করে তিনি বলেন: তাদেরও (সেহাগ-জাকির) কাজ কর্মে ভুল থাকতে পারে। তবে তারা ছাত্রী সংগঠনটা ভালো ভাবে দাঁড় করিয়েছে। পুরো টিএসসি ভরে গেছে। পরিমাণ গত এতো ব্যাপকতা তখন ছিলো না। তোমাদের সাহস নিয়ে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হবে বেগম মুজিবের মতো।

বিএনপি নেতাদের আন্দোলনের হুমকি প্রসঙ্গে তিনি বলেন: আন্দোলনের নামে কর্মীদের মাঠে নামিয়ে এয়ারকন্ডিশন রুমে বসে হিন্দী সিরিয়াল দেখবেন, তাহলে আন্দোলনটা কীভাবে করবেন। আপনারা যে কতবার নীরব বিপ্লব করে ফেলেন, জাতি দেখেছে। বিএনপির আন্দোলন এখন চোরাবালিতে আটকে গেছে। মানুষের মুড এখন নির্বাচনের মুড, এই মুডে মানুষ আন্দোলনের ডাক শুনবে না।

ওবায়দুল কাদের আরও বলেন: আক্রান্ত হয়েও কারও কারও দৃষ্টিতে আমরা আক্রমণকারী। এ বিষয়টিকে অনেকেই ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে। যারা হামলা করেছে বা যাদের হামলার শিকার হয়েছে, সকলকে বলা হচ্ছে আন্দোলনকারী! যারা হামলা করেছে, তারা কারা। বাংলাদেশের মানুষ আজ জানতে চায়?

‘বিএনপি জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডার কাছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে নালিশ করেছে। আমরা জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়নকে জানিয়ে দিয়েছি অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না। সত্য অনুসন্ধান করুন, সত্য উদঘাটন করুন।’

শোকের মাস আগস্টের পর সেপ্টেম্বরে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে জানিয়ে কাদের বলেন, নেত্রীর কাছে সবার তথ্য আছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। এখন শোকের মাস আগস্ট। আশা করি ঈদের পরে সেপ্টেম্বরে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আমারও অনেক আগেই দলের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার কথা ছিল। আসলে সময় হলে সবই হয়। রাজনীতি লেগে থাকতে হয়, লেগে থাকার কোন বিকল্প নেই।