চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ছাত্রদল-ছাত্র ইউনিয়ন নেতাদের পুরনো ছবি দিয়ে অপপ্রচারের অভিযোগ

রেস্টুরেন্টের একটি টেবিল ঘিরে ছাত্রদল ও ছাত্র ইউনিয়নের চার নেতার একসঙ্গে বসা একটি ছবি ফেসবুকে প্রচার করে বলা হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক সহিংস পরিস্থিতির জন্য তারা ষড়যন্ত্র করেছে। অথচ ছবিটি দুই বছর আগের একটি সৌজন্য সাক্ষাতের ছবি বলে দাবি করেছেন ওই ছবিতে থাকা ছাত্রদল ও ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা।

তারা জানান, আদর্শিক মিল না থাকলেও রাজনৈতিক শিষ্টাচার হিসেবে ২০১৬ সালে এক সৌজন্য সাক্ষাতে ওই ছবি তোলা হয়েছিলো।

নিজেরা হামলা চালিয়ে এখন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির ষড়যন্ত্রের গল্প বানাতে ছাত্রলীগ সভাপতি দুই বছর আগের ছবিটি ব্যবহার করেছেন বলে দাবি করেছেন ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী।

চ্যানেল আই অনলাইনকে ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বলেন: ২০১৬ সালে সদ্য আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হয়েছি, তুহিন কান্তি দাস সাধারণ সম্পাদক হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতির সংস্কৃতি অনুযায়ী নতুন কমিটির পর রাজনৈতিক শিষ্টার অনুযায়ী সব ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত ও মিষ্টি মুখ করানো হয়। মধুর ক্যান্টিনে আমরা ছাত্রলীগকে মিষ্টিমুখ করিয়েছিলাম, তারাও করিয়েছিলো।


যেহেতু ছাত্রদল ক্যান্টিনে আসতে পারে না সেহেতু পল্টনে আমরা একটি রেস্টুরেন্টে ছাত্র সংগঠনটির দুই নেতার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেছিলাম। শুধু নতুন কমিটির সময় নয়, ছাত্র সংগঠনের কাউন্সিলে, ইফতার অনুষ্ঠানগুলোতেও সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দকে আমন্ত্রণ করাটা সাধারণ রাজনৈতিক শিষ্টাচার।

রাজনৈতিক শিষ্টাচারের সৌজন্য সাক্ষাতের দুই বছরের পুরানো ছবিকে এখন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ওই ছবিতে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমানে ক্যাম্পাস কমিটির সভাপতি তুহিন কান্তি দাস।

চ্যানেল আই অনলাইনকে তুহিন বলেন: ছাত্রদল কোন নিষিদ্ধ সংগঠন নয়। রাজনৈতিক শিষ্টাচার, সৌজন্য অনুযায়ী আমরা ২০১৬ সালে ছাত্রদলের দুই নেতার সঙ্গে বসেছিলাম। বর্তমান আন্দোলনের সঙ্গে এই ছবির কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।এই ছবি দিয়ে অপপ্রচার চালানো নিন্দনীয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান আন্দোলন এবং আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ছাত্র ইউনিয়নের সংশ্লিষ্টতা ব্যাখ্যা করে সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটির সভাপতি আরও বলেন: ১৪ জানুয়ারি ৭ কলেজের অধিভূক্তি বাতিলের আন্দোলনে ছাত্র ইউনিয়নের সংশ্লিষ্টতা ছিলো না। উল্টো আমরা ‘উগ্র ঢাবিয়ান’ মানসিকতার পক্ষে দাঁড়াইনি। কিন্তু যখন এই আন্দোলনকারীরা বিশেষ করে ছাত্রীরা ভিসি কার্যালয়ের সামনে ছাত্রলীগের নিপীড়নের শিকার হয় তখন আমরা আন্দোলনে নামি।

যে ছবিটি ফেসবুকে প্রচার করে বাম ছাত্র সংগঠন এবং ডানপন্থী রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন একসঙ্গে ষড়যন্ত্র করেছে বলা হচ্ছে সেটি একটি সেলফি।

২০১৬ সালে এই সেলফি তুলেছিলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক সর্দার আমিরুল ইসলাম সাগর। ওই ছবিটি ২০১৭ সালে আরেকটি আন্দোলনে ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ছাত্রদল থেকে পদবি হারানো এই নেতা নিজেকে ছাত্রদলের প্রথম মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক পরিচয় দিয়ে চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: ২৩ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের পুরুষ ও নারী কর্মীদের বর্বরোচিত ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে অপপ্রচারে নেমেছে ছাত্রলীগ। এর অংশ হিসেবে আকরাম ভাই, লিটন নন্দী, তুহিন কান্তি দাস ও আমার ছবিটি ২০১৭ সালে পোস্ট করা ছবিটি ব্যবহার করা হচ্ছে। ছবিটি তুলেছিলাম ২০১৬ সালে আমাদের সঙ্গে ছাত্র ইউনিয়ন নেতাদের সৌজন্য সাক্ষাতের সময়। ছবিটি আমি সে বছরই পোস্ট করিনি। পরবর্তীকালে ২০১৭ সালের এপ্রিলে ছাত্র ইউনিয়নের একটি আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে গিয়ে আমাদের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান খানের সম্মতি নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছিলাম। বর্তমানে নিপীড়নের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন করা হচ্ছে সেটার পেছনে ছাত্রদল-ছাত্রইউনিয়নের কোনো লিয়াজোঁ হয়নি।

২৩ জানুয়ারি ভিসি কার্যালয় ঘেরাও কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের হামলার পর ওই পরিস্থিতির জন্য বাম ছাত্রসংগঠনগুলোকে দায়ী করে আসছে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনটি।
আজ রোববার ফেসবুক পোস্টে ছাত্রদল ও ছাত্র ইউনিয়নের চার নেতার ছবি প্রকাশ করে ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ লিখেন: ছবিতে আছে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আকরাম(লাল গেঞ্জি পরিহিত), ছাত্রদলের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক সাগর,ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটনথনন্দী, ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের সভাপতি তুহিন কান্তি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কতিপয় বাম সংগঠনের আন্দোলনের নামে ষড়যন্ত্রগুলোর আসল চিত্রই এটি। আমরা ভুল করিনা, ছাত্রলীগ ভুল করে না।