বইমেলাকে ঘিরে নিজস্ব কিছু ভাবনা ফেসবুকে শেয়ার করেছেন চ্যানেল আই অনলাইনের আউটপুট এডিটর আব্দুল্লাহ আল সাফি। বই প্রকাশ নিয়ে নানা বিষয়, ছাত্রনেতাসহ বিভিন্ন ব্যস্ত লেখকের বই প্রকাশের বিভিন্ন দিক তিনি তার স্ট্যাটাসে তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি বইমেলাকে ঘিরে যে বই বিক্রি ও পড়ার উৎসব হচ্ছে তাতেও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি।
‘বই ও বইমেলা নিয়ে কিছু কথা’ শিরোনামে তিনি ফেসবুকে লিখেন, “বইয়ের প্রতি আমার আকর্ষণ সেই অনেক বছর থেকে। যদিও ইদানিং মফিজ হয়ে গেছি গার্মেন্টস টাইপ কাজ-কামে আর নানা ঝামেলায়, সময়ই বের করা মুশকিল। ২০১০ সালের পরে বাণিজ্য মেলায় যাওয়া না হলেও বইমেলা কোনো বারই মিস হয় না… তবে অনলাইনে বই কেনার সুযোগ থাকায়, আগামীতে বইমেলাও মিস হবে মনে হচ্ছে। প্রতি মাসেই বই কিনে থাকি, তবে তারমধ্যে ১/২টা না পড়া থেকে যাচ্ছে… খুবই বিরক্ত হই সেটা মনে হলে। কিছু করার নেই মমিন!
বইমেলা নিয়ে কোনো পোষ্ট বা প্রচারে যাই নাই এবার। প্রায় ৩০০০+ বই বের হয়েছে এ মেলায়। অনেকেই এতো বই বের করা নিয়ে সমালোচনা করছেন, যে সে বই বের করে ফেলছে বলে অনেকে ক্ষোভও জানাচ্ছে … তবে আমার কাছে বিষয়টা মোটেও খারাপ বলে মনে হচ্ছে না, ৩০০০ বইয়ের মধ্যে অন্তত ২০০০ জন লেখক/কবি/সাহিত্যিক/অনুবাদক (কারণ কারো আবার ২/৩টা বইও বের হয়েছে)…. একটা দেশে লেখালেখিতে ও বই বের করার মতো ২০০০ মানুষ থাকাটা বেশ! সাধুবাদ জানাই ’’
নিজের দুটি ব্যক্তিগত ভাবনার বিষয় শেয়ার করে তিনি লিখেছেন, ‘‘তবে দুটি বিষয় আমি বলতে চাই, একান্তই ব্যক্তিগত ভাবনা।
১. ৩০০০ বইয়ের প্রায় ৮০ শতাংশের বেশী বই প্রকাশে হয়তো লেখককেই টাকা খরচ করতে হয়েছে। আর টাকা খরচ না করলেও প্রকাশকের কাছ থেকে কোনো সম্মানি পাননি/পাবেন না। এখানে প্রকাশকরা হয়তো বলবেন, বই বিক্রি করে লাভ নেই। আর বিক্রি না হলে লেখক সম্মানি কীভাবে দেবো?… অনেক বই হয়তো লেখককেই পুশ সেল করতে হয়। অনেক লেখকের প্রকাশিত বই লেখকই কিনে কেন প্রকাশকের কাছ থেকে। অনেকে আবার বই প্রকাশ করে প্রকাশককে বিক্রি করতে দিয়ে থাকেন। এই বিষয়গুলো আমাকে খুব ভাবায়….
২. অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি যারা ব্যক্তি জীবনে প্রচণ্ড মানে প্রচণ্ড ব্যস্ত, তারা কীভাবে ৩০০-৪০০ পাতার বই বের করেন? আমি দু’চারজনকে চিনি এমন। বিষয়টি ছাত্রনেতাদের জন্যও প্রযোজ্য, যারা এবার বই লিখে বেস্টসেলার তালিকায় আছেন। একটি বই লেখার জন্য যে পূর্ব-প্রস্তুতিসহ মানসিক ও সময়গত প্রস্তুতি প্রয়োজন, তা কীভাবে করলেন তারা? আমার সেই সিক্রেট জানতে ইচ্ছে করছে। আরেকটি বিষয়, ফেসবুকে বইয়ের প্রচারের জন্য অনেকে পোষ্ট দেন, তা ঠিক আছে। কিন্তু অনেক প্রভাবশালীসহ পরিচিত ব্যক্তির বই কিনে তাকে ট্যাগ করে জানান দেওয়াটা ‘তেল’ দেয়ার মতো মনে হয় আমার কাছে (একান্তই নিজস্ব ভাবনা)। কাছের মানুষদের বই আমি কিনি, কিন্তু ট্যাগ করতে খারাপ লাগে। গত বইমেলায় অনেক পরিচিত ভাই-ব্রাদারের বইয়ের প্রচ্ছদ দিয়ে পোষ্ট দিয়েছিলাম, এতে পরিচিত অনেকে বাদ পড়েছিলেন..সেজন্য অনেকে ইনবক্সে বা সরাসরি মনখারাপ করেছিলেন। সেজন্য এবছর আর কারোটাই দেই নাই…. এ বিষয়ে আগেই লিখতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তাও ইচ্ছে করে লিখিনি…কারণ ট্যাগের মাধ্যমে অনেকের বই বিশেষ নজরে এসেছে..বিক্রি বেড়েছে। বইয়ের প্রচার-প্রসারে এটা অবশ্য একটা পজিটিভ দিক, আমার যতই তেলতেলে মনে হোক।
সবশেষ কথা, পড়ার বিকল্প নেই। তা জ্যান্ত বই হোক, গুগল হোক, চোরাই পিডিএফ হোক… জয় হোক বইয়ের, মানুষের চিন্তার।”