চুয়াডাঙ্গার ইমপ্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারের চক্ষু শিবিরে অস্ত্রোপচারের পর চোখ হারানো ১৭ জনের প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এ সংক্রান্ত জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে রোববার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করে।
রায়ে ইমপ্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টার ও অস্ত্রোপচারে ব্যবহৃত ওষুধের কোম্পানিকে (আইরিশ কোম্পানি) সমান হারে এই ক্ষতিপূরণের টাকা দিতে বলা হয়।
এছাড়া চোখ হারানো ১৭ জনসহ অস্ত্রোপচারের পর সংক্রমণের শিকার আরও তিন রোগীকে আজীবন বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতে ইমপ্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া আদালত বলেছেন, ‘ইমপ্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারের বাইরে অন্যকোনো হাসপাতালে এই ২০ জনের চিকিৎসার প্রয়োজন হলে সে চিকিৎসার ব্যায়ও ইমপ্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টার বহন করবে।
আজ আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত। সঙ্গে ছিলেন সুভাষ চন্দ্র দাস ও মো. শাহিনুর রহমান। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। আর ইমপ্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এম আমীর-উল ইসলাম ও আইরিশ কোম্পানির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শ ম রেজাউল করিম।
এর আগে গত ১৩ আগস্ট চোখ হারানো ২০ জনকে প্রত্যেককে এক কোটি করে টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষ হয়। শুনানি শেষে রায়ের জন্য আজকের দিন ধার্য করেন আদালত।
রিট আবেদনের তথ্য থেকে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গার ইমপ্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে তিন দিনের চক্ষু শিবিরের দ্বিতীয় দিন গত ৫ মার্চ ২৪ জন নারী-পুরুষের চোখের ছানি অপারেশন করা হয়।
তবে অপারেশনের পর বাসায় ফিরেই ওই ২০ জন রোগীর চোখে জ্বালা পোড়াসহ ব্যথা দেখা দেয়। এর পরদিন তারা ইমপ্যাক্ট হাসপাতালে যোগাযোগ করলে রোগীদের গুরুত্ব না দিয়ে বাড়িতে ফেরত পাঠানো হয়।
এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য জরুরি ভিত্তিতে রোগীদের ঢাকায় নেওয়া হলে চোখ নষ্ট হওয়া ২০ জন নারী-পুরুষের মধ্যে ১৯ জনের একটি করে চোখ তুলে ফেলতে হয়।
এরপর ‘চক্ষু শিবিরে গিয়ে চোখ হারালেন ২০ জন!’ শিরোনামে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে হাইকোর্টে একটি রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাসগুপ্ত।
সেই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত রুল জারি করেন। রুলে, চুয়াডাঙ্গার ইমপ্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টার আয়োজিত চক্ষু শিবিরে চিকিৎসার পর চোখ হারানো ২০ জনকে এক কোটি টাকা করে কেন ক্ষতিপূরণ দেওয়া দেয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়।
সেই সাথে ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা কেন গ্রহণ করা হবে না এবং ওই চক্ষু শিবিরের অস্ত্রোপচারের নিরাপদ ব্যবস্থা গ্রহণের নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়।
স্বাস্থ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন, ডিসি ও এসপি, ইমপ্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টার, ডা.মোহাম্মদ শাহীনসহ ১০ জনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।