শারীরিকভাবে পিছিয়ে থাকা কোনো ব্যক্তি যখন ইচ্ছাশক্তির বলে নিজের স্বপ্ন পূরণের দিকে এগিয়ে যায়, তাকে বাহবা না দিয়ে কোনো উপায় থাকে না। এমনই প্রশংসার দাবিদারদের একজন হলেন ব্র্যাডলি ওয়ারউইক। ২১ বছর বয়সী ব্র্যাডলি ছোটবেলা থেকেই সঙ্গীত ভালোবাসতেন খুব। ইচ্ছে ছিলো সঙ্গীতচর্চা করে একে পেশা হিসেবে গ্রহণ করার। কিন্তু কপালদোষে অল্প বয়সেই আক্রান্ত সেরিব্রাল প্যানসি রোগে।
‘সেরিব্রাল প্যানসি’ স্নায়ুতন্ত্রের এক ধরণের রোগ; যার কারণে ছোটবেলা থেকেই চলাফেরায় সমস্যা দেখা দেয়। এক সময় আক্রান্ত ব্যক্তির নড়াচড়ার ক্ষমতা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়।
তাই ইচ্ছা এবং প্রতিভা থাকা স্বত্ত্বেও ব্র্যাডলি সঙ্গীত বাজাতে পারতেন না। সবসময় এক ধরণের আশঙ্কায় ভুগতেন যে, এই রোগ মিউজিশিয়ান হিসেবে তার ক্যারিয়ার গড়ে তোলার পথে চরম বাধা। কারণ যে নড়তে পারে না, সে বাদ্যযন্ত্র বাজাবে কী করে? সুরই বা তৈরি করবে কীভাবে?
ব্র্যাডলির এই দুঃসময়ে ত্রাণকর্তা হিসেবে এগিয়ে আসে আধুনিক প্রযুক্তি। হাত-পা নাড়াতে না পারলে কী হয়েছে? চোখ তো নাড়াতে পারেন? সেই চোখ দিয়েই প্রতিভাধর ব্র্যাডলি তুলবেন সুরের মূর্ছনা!
দু’বছর আগে ব্র্যাডলি ‘আইকীজ’ নামের এমন এক সফটওয়্যার প্রযুক্তির সন্ধান পান, যা বিশেষ সেন্সরের মাধ্যমে তার চাহনি ও চোখের ইশারার ভিন্নতা সনাক্ত করতে পারে এবং সামনের মনিটরে তিনি বাদ্যযন্ত্রের কোন ‘কী’র দিকে তাকিয়ে আছেন তা টের পেয়ে ঠিক সেটাই বাজাতে পারে।
নতুন এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে ব্র্যাডলি গতবছর একটি সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় অডিশন দিতে যান। তার সঙ্গীত প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বিচারকরা তাকে অংশ করে নেন সাউথ ওয়েস্ট ওপেন ইউথ অর্কেস্ট্রায়। কোনো না কোনো ধরণের শারীরিক অক্ষমতা সম্পন্ন তরুণদের নিয়ে ব্রিটেনের প্রথম আঞ্চলিক সঙ্গীতদল এটি।
ব্র্যাডলি বলেন, ‘সঙ্গীত আমাকে শান্তি দেয়, ভেতরটা খুশিতে ভরে তোলে। গানের কথা আর সুর আমাকে সেসব মানুষগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয় যারা আমার মনের খুব কাছের। আমি মিউজিশিয়ান হিসেবেই ক্যারিয়ার গড়তে চাই।’
ব্র্যাডলি বর্তমানে গ্লাউস্টারশায়ারের স্ট্রাউডে অবস্থিত সেইন্ট মার্টিন কলেজে পড়াশোনা করছেন। বিশেষ ধরণের সমস্যাগ্রস্ত তরুণ-তরুণীদের জন্য সেখানে শিক্ষাগ্রহণের বিশেষ ব্যবস্থা আছে।
সঙ্গীতচর্চার পাশাপাশি কথা বলা এমনকি ইমেইল পাঠানোর কাজেও ব্র্যাডলি আইকীজ ব্যবহার করেন।