ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে শুরু হওয়া ভোটে ভাগ্য নির্ধারণ হবে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। নন্দীগ্রাম থেকে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তারই এক সময়ের রাজনৈতিক সহকর্মী শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে। যিনি কিছু দিন আগে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।
দ্বিতীয় দফা ৩০ আসনে আজ ভোট হলেও সবার নজর নন্দীগ্রামে। এরই মধ্যে ‘হাইভোল্টেজ’ খ্যাতি পাওয়া এই বিধানসভা আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসে পা ‘ভাঙে’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সেই ঘটনায় প্রথমে তিনি বিজেপির চক্রান্ত বললেও পরে ওই বক্তব্য থেকে সরে আসেন। তবে মমতার এই অভিযোগকে ‘মিথ্যা’ ও ‘নাটক’ উল্লেখ করে ভোট পাওয়ার কৌশল হিসেবে মন্তব্য করে বিজেপি।
নন্দীগ্রাম আন্দোলনের অন্যতম নেতা শুভেন্দু অধিকারীর খাসতালুক বলে পরিচিত এই আসনে যে কোনো সহিংসতা এড়াতে ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। মোতায়েন করা হয়েছে বিপুল পরিমাণে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য।
বৃহস্পতিবার সকালে ভোটের শুরু কিছুক্ষণের মধ্যেই নিজের ভোট দিয়েছেন বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী। নন্দীগ্রামের এই ভূমিপত্র গাড়িতে করে ভোটকেন্দ্রের দিকে রওনা দিলেও পথে গাড়ি থেকে নেমে মোটরসাইকেলে চেপে ভোট দিতে যান তিনি।
পরে ভোট দিয়ে সাংবাদিকদের শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ১০০ বুথে এজেন্ট দিতে পারেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন। অন্তত অর্ধলাখ ভোটে হারবেন মমতা।
এই নির্বাচনে ‘খেলা হবে’ স্লোগান দিয়ে শুরু থেকেই মাঠে আছেন মমতা। তিনি তার দীর্ঘদিনে ভোটকেন্দ্র ভবানীপুর থেকে না লড়ে নন্দীগ্রামে লড়ছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এর মাধ্যমে মমতা বড় ধরণের ঝুঁকি নিয়ে ফেলেছেন। কেননা শুভেন্দু অধিকারীর প্রায় ৪০ বছরের রাজনৈতিক জীবনের পুরো সময়টাই নন্দীগ্রামের মানুষের সাথে আছেন। তাদের কাছে তাই শুভেন্দু ‘ফিট খেলোয়াড়’। আর হঠাৎ আসা মমতা ‘আনফিট খেলোয়াড়’।
এখন দেখা যাক নকআউট এই ম্যাচে কে জেতে আর কে হারে? তার জন্য অবশ্য অপেক্ষা করতে হবে ২ মে পর্যন্ত।
এদিন ভোট হবে পূর্ব মেদিনীপুরের ৯টি আসনে। এছাড়াও পশ্চিম মেদিনীপুরের ৯টি বাঁকুড়ার ৮টি ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার ৪ আসনে ভোট নেওয়া হবে।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ২৯৪টি আসন বিশিষ্ট পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় এবার প্রায় ১ মাস ধরে ৮ দফায় ভোট নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ২৭ মার্চ প্রথম দফায় ভোট হয়েছে ৩০টি আসনে।
এরপর তৃতীয় দফায় ৩১টি আসনে ৬ এপ্রিল, চতুর্থ দফায় ৪৪টি আসনে ৯ এপ্রিল, পঞ্চম দফায় ৪৫টি আসনে ১৭ এপ্রিল ভোট, ষষ্ঠ দফায় ৪৩টি আসনে ২২ এপ্রিল, সপ্তম দফায় ৩৬টি আসনে ২৬ এপ্রিল এবং ২৯ এপ্রিল অষ্টম দফায় ৩৫টি ভোটগ্রহণ করা হবে। আগামী ২ মে ভোটের ফলাফল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন।
২০১৬ সালে গত বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ২১১টি আসন পেয়ে এককভাবে ক্ষমতায় এসেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। ওই নির্বাচনে বামদলগুলোর সঙ্গে জোট বেধে কংগ্রেস পেয়েছিল ৪৪টি আসন। আর সিপিএম-এর নেতৃত্বে বামদল পেয়েছিল ২৬টি আসন। বিজেপি পেয়েছিল মাত্র ৩টি আসন।
এবার সেই ৩ আসন পাওয়া দলটি দুইশোরও বেশি আসন পাওয়ার টার্গেট করেছে। এরই মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো অনেক প্রভাবশালী নেতারা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।
সাবেক মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর হাত ধরে তৃণমূলের ১০ জন বিধায়ক ও সাংসদকে সঙ্গে নিয়ে যোগ দেন বিজেপিতে। এরপর তার নেতৃত্বে আরও কিছু নেতা তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে আসে।