চীনে বায়ু দূষণে প্রতিদিন গড়ে ৪ হাজার মানুষ মারা যায়। বড় বড় শহরে কয়লা ভিত্তিক জ্বালানী ব্যবহারই এর বড় কারণ। বার্কলে আর্থ নামে একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা সংস্থা বৃহস্পতিবার এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
মৃত্যু ঘটায় এমন দূষিত পদার্থ দেশটির বাতাসে উচ্চ মাত্রায় পাওয়া গেছে। যার কারণে মানুষের হার্ট অ্যাটাক, লান্স ক্যান্সার ও অ্যাজমার মতো রোগ বেশি মাত্রায় হয়ে থাকে। পরিসংখ্যান বলছে বায়ু দূষণের কারণে চীনে প্রতি বছর মারা যাচ্ছে প্রায় ১৬ লক্ষ মানুষ। যা দেশটির মোট মৃত্যুহারের ১৭ শতাংশ।
ওই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বার্কলে আর্থের সায়েন্টিফিক ডিরেক্টর রিচার্ড মুলার বলেন, আমি যখন চীনের বেইজিং এ ছিলাম তখনও বায়ু দূষণের মাত্রা মারাত্মক মাত্রায় ছিল। প্রতি এক ঘণ্টার আমার আয়ু কমেছে ২০ মিনিট করে। এমনটা আরেক ভাবে হতে পারে যদি কোনো মানুষ প্রতি ঘণ্টায় ১টার বেশি সিগারেট খায়। সেক্ষেত্রেও মানুষের আয়ু কমতে পারে ২০ মিনিট করে।
উচ্চমাত্রার বায়ু দূষণের কথা চীনের কর্তৃপক্ষও স্বীকার করেছে। বিগত কয়েক বছরে এই পরিস্থিতি আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে রাজধানী বেইজিং ও সাংহাইতে। শহর দুটি এখন বায়ু দূষণ সহনীয় মাত্রায় আনার জন্য মনিটরিং করার ব্যবস্থা করেছে।
যানবাহনের জন্য জ্বালানী ব্যবহারের ক্ষেত্রেও নজরদারী বাড়ানো হয়েছে সেই সাথে কয়লা ভিত্তিক বিদুৎ কেন্দ্র এবং শিল্প কলকারখানা শহরের বাইরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
বায়ু দূষণের জন্য দায়ী পলিউশন পার্টিকেল সহনীয় মাত্রার থেকে অনেক আগেই অতিক্রম করেছে যা মানুষের স্বাস্থ্য’র জন্য বিপদ ডেকে আনছে। পরিবেশ নিয়ে বিশ্বব্যাপী কাজ করে এমন একটি সংগঠন গ্রীনপিস এর পূর্ব-এশিয়ার জলবায়ু নিয়ে কাজ করেন ডং লিয়ানসি।
তিনি বলেন, এই বছরের প্রথম প্রান্তিকে চীনের ৩ শ’ ৫৮টি শহর অনেকটা দূষণ কমিয়ে আনতে পেরেছে। রিচার্ড মুলার এবং গবেষণা কাজের সহযোগী রবার্ট রড এর বিশ্লেষণ হচ্ছে তারা এই গবেষণাটি করার আগে প্রায় ১৫শ’ চীনের বিভিন্ন শিল্প এলাকায় চার মাস তথ্য সংগ্রহের জন্য কাজ করেছে। তারপর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে তাদের তথ্য উপাত্ত দিয়ে পরীক্ষা করে বায়ু দূষণের মাত্রার কারনে মানুষের রোগের হার নির্ণয়ের জন্য।
তাদের সংগ্রহ করা তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে দেখা গেছে চীনের ৯২ শতাংশ মানুষ গত এপ্রিল থেকে আগস্টের মধ্যে কমপক্ষে ১শ’ ২০ ঘণ্টা সময় কাটিয়েছে দূষিত বায়ুর মধ্যে।
চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর মতে বায়ু দূষন ঠেকাতে ২০১৪ সালে দেশটির ১৬১ টি শহরের প্রায় ৯০ শতাংশ মতো মনিটরিং ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়ে।
বার্কলে আর্থের গবেষণায় উঠে এসেছে বাতাসে সালফার ডিঅক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে গছে আশংকাজনক ভাবে।
চীনের বায়ু দূষণের মূল কারণ মাত্রাতিরিক্ত কয়লা ব্যবহার। চীন তার জ্বালানীর যোগান নিশ্চিত করে ৬৪ কয়লা পুড়িয়ে।
বার্কলে আর্থের গবেষণার কাজে টাকা ঢেলেছে মার্কিন ডিপার্টমেন্ট অব এনার্জী। ২০১০ সালে বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া এবং বায়ু দূষনের কারণ অনুসন্ধানের পিছনে সংস্থাটি গবেষণা করে থাকে।