সিকিমে চীনের রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়ে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই চীনকে হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখলো ভারত। ভারত-চীন-ভুটান তিন দেশের সম্মিলনস্থল দোকলামে চীনের এই একতরফা প্রচেষ্টার প্রেক্ষিতে ভারতকে ১৯৬২ সালের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলো চীন। তার জবাবেই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অরুণ জেটলি শুক্রবার বলেন, “১৯৬২ সালের ভারত আর ২০১৭ সালের ভারত এক নয়।”
সীমানা নিয়ে বিরোধ থেকে ভারত ও চীনের মধ্যে ১৯৬২ সালে যুদ্ধে চীনের কাছে ভারত পরাজিত হয়। বৃহস্পতিবার পিউপিলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) মুখপাত্র ১৯৬২ সালে ভারতের সামরিক বিপর্যয়ের থেকে শিক্ষা নিতে ভারতকে আহ্বান জানায়।
সেই মন্তব্যের প্রেক্ষিতেই ইন্ডিয়া টুডের মধ্যরাতের আলোচনায় অরুণের জবাব, “তারা যদি আমাদের ১৯৬২ সালের কথা মনে করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে, তবে তাদের বলছি, ১৯৬২ সালের পরিস্থিতি ভিন্ন ছিলো, আজকের ভারত ভিন্ন।” (সূত্র: হিন্দুস্থান টাইমস, এনডিটিভি)
বৃহস্পতিবার ভারতকে সতর্ক করে দিয়ে চীন বলে, ‘চীনের সীমান্ত’ থেকে ভারতের সেনাদের প্রত্যাহার করে নেয়া না হলে, তা সাম্প্রতিক সীমান্ত উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দেবে। ‘যুদ্ধ ডেকে না আনার জন্য’ নিউ দিল্লির প্রতি আহ্বানও জানায় তারা।
ভারতের উত্তর-পূর্বাশের সাথে দেশটির সংযোগ স্থাপনকারী শিলিগুরি করিডরের কাছে দোকলাম এলাকায় ভারত ও চীনের সেনারা অবস্থান নেওয়ার পর উভয় দেশের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এমন মন্তব্য আসলো। জম্মু-কাশ্মির থেকে অরুণাচল প্রদেশ পর্যন্ত ভারত-চীনের ৩ হাজার ৪৮৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তের মধ্যে ২২০ কিলোমিটার অংশ সিকিমে। এই সিকিম সেক্টরেই দোকলামের অবস্থান।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভুটানের সরকার এটা পরিষ্কার করেছে যে, চীন ভুটানের ভূমি দাবি করছে এবং তা খুবই অন্যায়। ভুটানের সরকারের বিবৃতির পর, আমি মনে করি পরিস্থিতি একেবারে স্পষ্ট। তা ভুটানের ভূমি, ভারত সীমান্তের কাছে এবং নিরাপত্তা প্রদানে ভুটান ও ভারতের মধ্যে চুক্তি রয়েছে।”
“ভুটান পরিষ্কার করেছে যে, চীন বর্তমান স্থিতাবস্থার পাল্টে দিতে চায়। এর পরে, আমি মনি করি ইস্যুটি সম্পূর্ণ পরিষ্কার। আমি সেখানে এসে অন্য দেশের ভূমি দখল করে নিবো, যা চীন করছে এবং তা একেবারেই ঠিক নয়।”
সিকিম সেক্টরের দোকলামে চীনের রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগকে “ভারতের নিরাপত্তায় স্থিতাবস্থার ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন ঘটাবে।” বলেও এক বিবৃতিতে নিউ দিল্লির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চীনের সাম্প্রতিক কার্যক্রমে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে।
চীন সরকারের কয়েকটি বিবৃতির সাপেক্ষেও অবস্থান পরিষ্কার করে ভারত, ভারতীয় বাহিনীর প্রতি সীমান্ত অতিক্রম করে চীনে অনুপ্রবেশের অভিযোগও অস্বীকার করে।
ভারত, চীন এবং ভুটানের তিন দেশের সম্মিলনস্থল দোকলাম একটি বিতর্কিত এলাকা। দোকলাম নিয়ে চীন ও ভুটানের মধ্যে দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিতর্ক রয়েছে। চীন ও ভুটানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কও নেই। ভুটানের সাথে তাই এবিষয়ে আলোচনায় লিপ্ত রয়েছে ভারত। চীনের এই রাস্তা নির্মাণ প্রক্রিয়াকে অবৈধ মনে করে ভুটান।
১৬ জুন এক বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় জানায়, পিএলএ দোকলাম এলাকায় প্রবেশ করে একটি রাস্তা নির্মাণের চেষ্টা করে, এই একতরফা কার্যক্রমে বাধা দেয় রয়্যাল ভুটান আর্মির প্রহরী দল। ২০ জুন নিউ দিল্লির দূতাবাস থেকে রয়্যাল গভনমেন্ট অব ভুটানের (আরজিওবি) রাষ্ট্রদূত চীনা সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়।
২০১২ সালে সিকিম সেক্টরের সীমান্ত নিয়ে বেইজিংয়ের সাথে ভারতের পৌঁছানো চুক্তির ভিত্তিতে এই রাস্তা নির্মাণের বিরোধীতা করে ভারত। যেখানে তিন দেশের সম্মতিতেই এই সীমান্তে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে উল্লেখ ছিলো। একতরফা কোন উদ্যোগ এই সমঝোতার বরখেলাপ। শুক্রবারের এক বিবৃতিতে এমনটি বলে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় জানায়, ভুটানের সাথে ভারতের সীমান্ত বাহিনীও চীনের রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগে বাধা দেয় এবং তা অব্যাহত থাকবে বলেও জানানো হয়।
একতরফা ভাবে স্থিতাবস্থা পরিবর্তন না করারও আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, ভারত চীন কোন সমঝোতায় পৌঁছালে তা উভয়পক্ষই মেনে নেবে। সীমান্তে শান্তি কামনা করে ভারত আলোচনার মাধ্যমে সীমান্ত সংক্রান্ত বিরোধ মীমাংসার আহ্বান জানায়।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লু কাং জানান, সিকিমের বিরোধ নিষ্পত্তিতে কূটনৈতিক চ্যানেলগুলো (ভারত-চীন) নির্বিঘ্ন রয়েছে। “অর্থপূর্ণ আলোচনার” আহ্বান জানিয়ে তিনি দাবি করেন, দোকলাম জুড়ে চীনের ‘তর্কাতীত সার্বভৌমত্ব’ অধিকারের। সেখান থেকে ভারতের সেনা প্রত্যাহারের আহ্বানও জানান তিনি।
ভুটানের সীমান্তে রাস্তা নির্মাণের মাধ্যমে চীন চুক্তিভঙ্গ করছে বলে ভুটান যে অভিযোগ করেছে, তাও অস্বীকার করেন তিনি।