চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

চিকিৎসার জন্য খালেদার বিদেশ যেতে কি অনুমতি লাগবে?

পাঁচ বছরের সাজাপ্রাপ্ত কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনে বিদেশ যেতে হলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অনুমতি নিতে হবে। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি সরকারের সাবেক আইনমন্ত্রীরা চ্যানেল আই অনলাইনের কাছে এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন।

খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা ও বিদেশ যাওয়ার প্রসঙ্গটি শুক্রবার দেশের শীর্ষ দুই রাজনৈতিক দলের নেতার বক্তব্যে উঠে আসে। এদিন সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে খালেদা জিয়ার শারীরিক সুস্থতা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান।

এর কয়েক ঘণ্টা পরই ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘খালেদা জিয়া প্রকৃতপক্ষে অসুস্থ হলে, চিকিৎসকের পরামর্শে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নেবে সরকার। প্রয়োজনে তাকে বিদেশে পাঠানো হবে। খালেদা জিয়া জেলে বলে সরকার অমানবিক হবে না।’

শীর্ষ দুই রাজনৈতিক দলের দুই নেতার এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কারাবন্দী খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার প্রয়োজনে বিদেশ যাওয়ার প্রক্রিয়া বিষয়ে জানতে কথা হয় আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি সরকারের সাবেক আইন মন্ত্রীদের সঙ্গে।

সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: ‘খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আপিল বিভাগের আদেশে ৮ মে পর্যন্ত স্থগিত রয়েছে। এমতাবস্থায়, সুচিকিৎসার জন্য যদি তাকে বিদেশে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, তাহলে আগে তাকে আপিল বিভাগের অনুমতি নিতে হবে। আর আপিল বিভাগের অনুমতি মিললেই কেবল চিকিৎসার জন্য তার বিদেশ যাওয়া সম্ভব।’

একই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: ‘যেহেতু বিএনপি চেয়ারপার্সনকে দেওয়া হাইকোর্টের জামিন আপিল বিভাগের আদেশে স্থগিত রয়েছে, সেহেতু এখন উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনে বিএনপি চেয়ারপার্সনকে বিদেশে যেতে হলে আপিল বিভাগের একটা অনুমতি লাগবে।’

কারাবন্দী থাকাকালীন চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার কোন নজির আছে কিনা এমন প্রশ্নে মওদুদ আহমদ বলেন: ‘এদেশে প্রতিদিনই এখন নতুন নতুন নজির হয়। নজির এখানে কোন বিষয় না।’

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক আখতারুজ্জামান সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন।

এই মামলায় খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান, মাগুরার বিএনপির সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত।

সেই সঙ্গে খালেদা তারেকসহ দণ্ডিত সবাইকে মোট ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা ৮০ পয়সা জরিমানা করা হয়।

এই রায়ের পরই খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয়। পরবর্তীতে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল ও জামিন আবেদন করেন খালেদা জিয়া।

গত ১২ মার্চ বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দেন।

কিন্তু এরপর জামিন স্থগিত চেয়ে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন করলে খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন ৮ মে পর্যন্ত স্থগিত করে আদেশ দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ।