ঈদের আগেই চাল ব্যবসায়ীরা জানিয়ে রেখেছিলেন, ‘বেশি দামে ধান কেনায়’ চালে তাদের খুব একটা মুনাফা হচ্ছে না। পরে দেখা গেল, আসলে সেই বলাটা ছিল ব্যবসায়ীদের আরও মুনাফা পাওয়ার প্রচ্ছন্ন দাবি। ইনিয়ে-বিনিয়ে আর কৌশলে বলা সেই কথা তারা বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন দাম বাড়িয়ে। ঈদের পর থেকে বাড়তে থাকা চালের দাম মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন। এরই মধ্যে এক বস্তা (৫০ কেজি) চালে ২’শ থেকে ৩’শ টাকা বেড়ে গেছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রিত সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) আজ রোববার রাজধানীর বাজারের বিক্রি হওয়া বিভিন্ন প্রকার চালের দামের যে তালিকা প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা গেছে এক সপ্তাহের ব্যবধানে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মোটা চালের দাম। যে চালের ওপর নির্ভরশীল দেশের নিম্নবিত্তের মানুষ। সেই চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪৪ টাকা থেকে ৪৮ টাকায়। গত সপ্তাহে যার দাম ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। তার মানে ৪ টাকা বা ৮. ১৪ শতাংশ বেড়েছে। এক বছর আগে এই চালের দাম ছিল ৩৪ থেকে ৩৬ টাকা।
শুধু মোটা চাল নয়, বেড়েছে সরু চালের দামও। টিসিবি বলেছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৬.২৫ শতাংশ বেড়ে নাজির ও মিনিকেট চালের প্রতি কেজিতে বেড়েছে অন্তত ৫ টাকা। গত সপ্তাহে সরু চালের দাম ছিল ৫০ টাকা থেকে ৬২ টাকা কেজি। কিন্তু এই সপ্তাহে তা বেড়ে হয়েছে ৫৫ থেকে ৬৪ টাকা কেজি।
মাঝারি মানের পাইজাম-লতা চালের দামেও একই অবস্থা। টিসিবির হিসাবে ৪৮ থেকে ৫৪ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে এই চাল। গত সপ্তাহে যার দাম ছিল ৪৪ থেকে ৫০ টাকা। প্রতি কেজিতে ৪ টাকা বা ৮.২৪ শতাংশ বেড়েছে।
অথচ এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) বলছে, দেশে ধান বা চালের কোনো অভাব নেই। আমাদের প্রশ্ন, তাহলে চালের দাম বাড়ছে কেন? ব্যবসায়ীরা ধানের দাম বেশি বলে যে অজুহাত দিচ্ছেন, তা যে মিথ্যাচার সেটা ব্রি তথ্য-উপাত্ত দিয়ে দেখিয়েছে। সব খরচের পরও ব্যবসায়ীদের পকেটে ভালো লাভ যাচ্ছে, সেটাও অঙ্ক কষে দেখিয়েছে ব্রি।
তার মানে ব্যবসায়ী স্বাভাবিক লাভে সন্তুষ্ট নয়। তাই তারা অস্বাভাবিক মুনাফার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। মানুষকে জিম্মি করে এই মহামারী এবং বন্যার সময় এসব মুনাফা লোভীরা নিজেদের স্বরূপ প্রকাশ করেছেন। যে কোনো উপায়েই হোক তাদের মুনাফা চাই-ই।
এই অতি মুনাফা লোভীদের কারণে খাদ্য মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রায় চাল সংগ্রহ করতে পারেনি। কেননা সরকার যে দাম নির্ধারণ করেছে, সেই দামে ব্যবসায়ীর চাল সরবরাহ করতে আগ্রহী নয়। এমনকি খাদ্যমন্ত্রীর হুমকিতেও কাজ হয়নি। যিনি নিজেও দেশের অন্যতম শীর্ষ চাল ব্যবসায়ী। আর কাজ হয়নি বলেই সরকার বিদেশ থেকে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কিন্তু তারপরও দাম না কমে বেড়ে যাওয়ায় বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাল ব্যবসায়ীদের চালবাজি আর কারসাজিতেই এমন হচ্ছে। যদি তাই হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না কেন? প্রশাসন চুপ করে বসে আছে কেন?
আমরা মনে করি, অতিদ্রুত এই সব চালবাজ, মুনাফা লোভী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। না হলে সাধারণ মানুষের দুর্দশা আরও বাড়বে। মহামারীর এই সময়ে তাদের জীবন আরও কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়বে।