হবিগঞ্জে চার শিশু হত্যা মামলায় প্রধান অভিযুক্ত আব্দুল আলী বাগালসহ তিনজনকে খালাস পেয়েছে অভিযোগ এনে শিশুদের স্বজনরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
বুধবার সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মকবুল আহসান রায় ঘোষণার করার পর স্বজনরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন বলে জানিয়েছে অনলাইন সংবাদ মাধ্যম সিলেটটুডে টুয়েন্টিফোর ডট কম।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে চার শিশু তাজেল,শুভ, ইসমাইল ও মনির হত্যা মামলার রায়ে তিনজনকে ফাঁসি ও দুইজনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।।
নিহত শিশুদের স্বজনরা বলেন, যে সবকিছুর পরিকল্পনা করলো, যার নির্দেশে ছেলেদের খুন করা হলো; সে কীভাবে খালাস পেয়ে যায়?
শিশু তাজেলের মা আমেনা খাতুন ও মনিরের মা ছুলেমা খাতুন বলেন, আব্দুল আলী বাগালের পরিকল্পনায়ই তাদের শিশুদের হত্যা করা হয়।
কাঁদতে কাঁদতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন মা আমেনা খাতুন, ছুলেমা খাতুন, পারুল বেগম ও মিনারা খাতুন এবং একজনের দাদী মরম চান। একটি এম্বুলেন্সে করে তাদেরকে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়।
বুধবার দুপুরে ঘোষিত রায়ে ৯ আসামীর মধ্যে রুবেল মিয়া, আরজু মিয়া ও পলাতক উস্তার মিয়াকে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি দশ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। জুয়েল মিয়া ও শাহেদকে সাত বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন বিচারক।
হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত না হওয়ায় মামলার জুয়েল-রুবেলের বাবা আব্দুল আলী বাগাল এবং পলাতক আসামি বাবুল মিয়া ও বিল্লালকে আদালত খালাস দিয়েছেন। এই মামলার আরেক আসামী বাচ্চু মিয়া আগেই র্যাবের সাথে কথিত বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়।
গত বছরে ১২ ফেব্রুয়ারি বিকালে বাড়ির পাশের মাঠে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয় হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার সুন্দ্রাটিকি গ্রামের আবদাল মিয়া তালুকদারের ছেলে মনির মিয়া (৭), ওয়াহিদ মিয়ার ছেলে জাকারিয়া আহমেদ শুভ (৮), আব্দুল আজিজের ছেলে তাজেল মিয়া (১০) ও আব্দুল কাদিরের ছেলে ইসমাইল হোসেন (১০)।
মনির সুন্দ্রাটিকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে, তার দুই চাচাত ভাই শুভ ও তাজেল একই স্কুলে দ্বিতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত। আর তাদের প্রতিবেশী ইসমাইল ছিল সুন্দ্রাটিকি মাদ্রাসার ছাত্র।
নিখোঁজের পাঁচ দিন পর ইছাবিল থেকে তাদের বালিচাপা লাশ উদ্ধার হলে দেশজুড়ে আলোচনা সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় বাহুবল থানায় নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন মনির মিয়ার বাবা আবদাল মিয়া।
২০১৬ বছরের ২৯ এপ্রিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির তৎকালীন ওসি মোক্তাদির হোসেন নয়জনের বিরুদ্ধেই আদালতে অভিযোগপত্র দেন। সেখানে বলা হয়, সুন্দ্রাটিকি গ্রামের দুই পঞ্চায়েত আবদাল মিয়া তালুকদার ও আব্দুল আলী বাগালের মধ্যে পারিবারিক বিরোধের জেরে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।
হবিগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে গত বছর ৭ সেপ্টেম্বর মামলার বিচারকাজ শুরুর পর ৫৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৫ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়।
এরপর গত ১৫ মার্চ মামলাটি সিলেট বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হলে আরও সাতজনের সাক্ষ্য শেষে রায় দেওয়া হলো।