চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

চামেলির চিকিৎসায় নতুন জটিলতা

ফোনের ওপারে ক্লান্ত একটা আর্তনাদ। সকাল থেকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে হাঁপিয়ে উঠেছেন। তবু একটু সাহায্যের আশায়, আরেকটু ভালো করে বেঁচে থাকার ভাবনায় সবার সঙ্গে কথা বলছেন। জানাচ্ছেন আকুতি। চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপে সাবেক নারী ক্রিকেটার চামেলি তুলে ধরলেন নিজের চিকিৎসা নিয়ে নতুন এক জটিলতার কথা।

চামেলির চাওয়া বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) থেকে তাকে পর্যাপ্ত আর্থিক সাহায্য করা হোক। অথবা সরাসরি বিদেশে পাঠিয়ে চিকিৎসা করা হোক। চামেলির দাবি, বোর্ড বলছে ভিন্ন কথা। বিসিবি কর্মকর্তাদের চাওয়া, আগে ঢাকায় এনে চামেলির পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। তারপর পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

বোর্ডের এমন প্রস্তাবে চামেলি হতাশ। রাজশাহী থেকে ফোনে বললেন, ‘আমি বাসা থেকেই বের হতে পারি না। সেখানে ঢাকায় যাবো কী করে। আর চিকিৎসকরা ইতিমধ্যে বলেই দিয়েছেন বিদেশে নিয়ে যেতে হবে। তাই ঝুঁকি নিয়ে আর ঢাকায় যেতে চাই না। আমি আশা করি বোর্ড আমাকে বিদেশে পাঠাবে অথবা আর্থিক সাহায্য করবে।’

আট বছর আগে পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায় চামেলির। সেখান থেকে মেরুদণ্ডের সমস্যা। এখন তা ছড়িয়ে পড়েছে ডান পায়ে। অবশ হতে চলেছে পা। আনসার ভিডিপিতে চাকরি করেন। মাস খানেক হল চাকরিতে যেতে পারছেন না।

বেশ কিছুদিন আগে বিসিবির কাছে চিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্যের আবেদন করেন চামেলি। তখন পুরুষ ক্রিকেটারদের খেলা নিয়ে কর্মকর্তারা ব্যস্ত ছিলেন। সেই সময় বলা হয়, সবাই ঢাকায় ফিরলে তার ব্যাপারে কথা বলা হবে। ওই সময় বোর্ডের নির্বাচক কমিটিতে থাকা এক কর্মকর্তা চামেলিকে গণমাধ্যমের সাহায্য নিতে পরামর্শ দেন। একটি চ্যানেলের সঙ্গে তিনি যোগাযোগও করিয়ে দেন। সেই চ্যানেলে চামেলিকে নিয়ে খবর প্রকাশিত হলে চারদিকে আলোচনার শুরু।

সোমবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবর চাউর হয়, দেশের প্রথম সারির দুই ক্রিকেটার চামেলিকে আর্থিক সাহায্য দিতে চেয়েছেন। চামেলি জানালেন, জাতীয় দলের একজন পেসার ইতিমধ্যে তাকে সাহায্য পাঠিয়েছেন। তবে সেটি খুব বেশি নয়!

‘সাহায্য করার জন্য তাকে ধন্যবাদ। কিন্তু এত কম টাকা দিয়ে আমার ১৫ দিনের চিকিৎসাও সম্ভব নয়। আমি হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে। আমাকে আপনারা বাঁচান’ -বলতে বলতে কেঁদে ওঠেন চামেলি।

সাকিব আল হাসান ফোন করেছিলেন। বিসিবির মতো তিনিও চামেলিকে ঢাকায় আসতে প্রস্তাব দিয়ে বলেন, ‘যত টাকা লাগে আমরা দিবো। কিন্তু আপনি একবার ঢাকায় এসে পরীক্ষা করান।’

বোর্ড এবং ক্রিকেটারদের এমন প্রস্তাবে চামেলি কিছুটা মন খারাপ করেছেন। তার ধারণা, অসুস্থতার খবর হয়তো সবাই পুরোপুরি বিশ্বাস করছেন না। তাই ঢাকায় যেতে বলছেন।

‘মিডিয়ার লোকজন বাড়ি এসে আমাকে দেখে যাচ্ছেন। যে ছবি ছাপা হয়েছে, তাতে বোঝা যায় আমি কতটা অসুস্থ। চিকিৎসকদের রিপোর্টও বোর্ডে জমা দিয়েছি। এরপরও আমাকে ঢাকায় যেতে বলা হচ্ছে। আশা করি সবাই আমার অবস্থা বুঝতে পেরে এগিয়ে আসবে।’

১৯৯৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত জাতীয় দলে খেলা চামেলি পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। ১৫ বছর আগে বোনের ডিভোর্স হয়ে গেছে। মা অসুস্থ। ধারদেনা করে মায়ের চিকিৎসা করাচ্ছেন। আনসার থেকে বেতন পাওয়ার আগ পর্যন্ত নিজে ওষুধ খেতে পারেন না।

এই পরিস্থিতিতে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন চামেলিকে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখিয়েছে। কিন্তু ঢাকায় আসা, না আসা নিয়ে তৈরি হওয়া অপ্রত্যাশিত জটিলতা সেই স্বপ্নকে কিছুটা ফিকে করেছে।

চামেলির আশা, বোর্ড নিশ্চয়ই বুঝবে। আর তার চিকিৎসার জন্য যথাযথ ব্যবস্থাও নিবে।