সিলেট থেকে: বড়মাপের ব্যাটসম্যানদের ধরনটাই এমন, চাপের সময় জ্বলে ওঠেন তারা। বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম সব চাপকে উড়িয়ে দিচ্ছেন তুড়ি মেরে। নানা ঘটনায় ‘আহত’ মুশফিক মাঠে রানের ফোয়ারা ছুটিয়ে করছেন প্রতিবাদ।
মুশফিকের আছে শুধু ব্যাটই। জিম্বাবুয়ের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে নামার আগের দিনই বিসিবির পক্ষ থেকে একরকম চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে তাকে, পাকিস্তানে না গেলে ওয়ানডে দলের একাদশে ঠাঁই হবে না! দেশের প্রায় প্রতিটি সংবাদমাধ্যমেই প্রকাশিত হয়েছে সেই খবর। যদিও মুশফিককে একাদশে রেখেছে টিম ম্যানেজমেন্ট।
চাপকে রানে রূপান্তর করার চ্যালেঞ্জ নিয়ে মাঠে এসেই মুশফিক ব্যাট তুলে নিলেন হাতে। ঘড়ির কাটা তখন ১১টা ছুঁইছুঁই। মাঠের দক্ষিণ পাশের নেটে বলবয় নাসিরকে নিয়ে শুরু করলেন অনুশীলন। পরে উইকেট ছেড়ে ঘাসের ওপর মারলেন একের পর এক স্লগ সুইপ। ম্যাচে নামার আগে সারলেন নিজের মতো করে ৩০ মিনিটের ব্যাটিং সেশন।
মুশফিক এমনই। চাপে পড়লে বেড়ে যায় রানের ক্ষুধা। পাকিস্তানে না যাওয়ায় ক্রিকেট বোর্ড থেকে প্রচ্ছন্ন একটা চাপ তৈরি হয়েছিল। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন বলেছিলেন, ঘরোয়া লিগ বিসিএলে মুশফিককে প্রমাণ দিয়ে আসতে হবে জাতীয় দলে। নির্বাচকের এ কথাটি যে বিসিবির পরিকল্পনার অংশ তা না বুঝতে পারার কোনো কারণ নেই।
গুঞ্জন ছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে মুশফিককে দলে না রাখার চিন্তা-ভাবনা করেছিল বিসিবি। বিসিএলে মুশফিক ১৪০ রানের ইনিংস খেলে ভেস্তে দিয়েছেন বোর্ডের কৌশল।
মিরপুর টেস্ট সামনে এলো। মুশফিকুর রহিম নেমে করে ফেললেন ডাবল সেঞ্চুরি। বাংলাদেশ জিতল ইনিংস ব্যবধানে। জয়ের পর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। মুশফিকের ডাবল সেঞ্চুরি নিয়ে একটিও প্রশংসাবাক্য বের হল না তার মুখ থেকে। উল্টো মুশিকে পাকিস্তান যেতে বাধ্য করার একরকম প্রকাশ্য চেষ্টা চালালেন তিনি।
মন্তব্য করলেন বোর্ডের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ সব ক্রিকেটারেরই পাকিস্তান যাওয়া উচিত। অথচ তিনি আগে বলেছিলেন পাকিস্তানে কাউকে যেতে জোর করা হবে না। টি-টুয়েন্টি ও একটি টেস্ট বাজেভাবে হেরে আসার পর সুর বদলালেন বিসিবি সভাপতি। মুশফিকের পরিবার পাকিস্তানে নিরাপত্তা নিয়ে সত্যিই শঙ্কিত কিনা, সেটি নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করলেন।
এক সাক্ষাৎকারে মুশফিক জানিয়ে দেন তৃতীয় ধাপে বাংলাদেশ দল পাকিস্তান গেলেও তিনি সিদ্ধান্ত বদলাবেন না। সোমবার সেটি জানিয়ে দিয়েছেন টিম ম্যানেজমেন্টকেও। তাতেই তার উপর আবারও চাপ তৈরি হয়েছে। চাপকে জয় করতে মুশফিক বাড়িয়ে দিয়েছেন অনুশীলন। ব্যাট যেন তার প্রতিবাদের ভাষা!