আজকের খবর, দেশে বেকার তরুণ, মধ্য বয়স্ক ও প্রৌঢ়দের মধ্যে ব্যাপক হৈ চৈ চলছে, সবাই ছুটছে পাঞ্জাবি পায়জামা ও টুপির কেনার দিকে। কারণ সিটি কর্পোরেশন নাকি আলেমদের নিয়োগ দেবে। দফায় দফায় দোয়া-মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাতের জন্য। বেকার পুরুষদের চাকরির এই সম্ভবনার খবরে কিঞ্চিত মন খারাপ দেশের বেকার তরুণী, মহিলা ও প্রৌঢ়াদের। কারণ বাংলাদেশে নারীদের এখনও হুজুর বা মৌলানার পোস্টে নিয়োগ হয় না। ফলে অসন্তোষের দানা বাঁধছে মহিলা মাদ্রাসাগুলিতে। মাদ্রাসা পাশ ছাত্ররা ব্যাপক খুশি কারণ তারাই যে এক তরফা নিয়োগ পাবে তাতে সন্দেহ নাই। কারণ তাদের কাগজপত্র প্রমাণ করে, তারাই এই চাকরির যোগ্য দাবিদার।
জানা যায়, নন-ইসলামিক প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করে বের হওয়া একদল পুরুষ ভিড় করেছেন নীলক্ষেত। কারণ আলেম পাসের নকল সার্টিফিকেটের জন্য। নীলক্ষেতের বিভিন্ন ফটোকপির দোকান, যেগুলিতে নকল সার্টিফিকেট বানানো হয় সেখানে উপচেপরা ভিড়। সেসব দোকান মালিকরা ব্যাপক খুশি হলেও কর্মচারীরা তেতোগেলা মুখে কাজ করে চলেছে। কারণ এতো কাজের চাপে খাওয়া-রেস্ট-ছুটি সব বন্ধ।
এদিকে আরো খবর যে, সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে আছে, সিটি কর্পোরেশনের ক্লিনার, ওষুধ ছিটানো, ময়লা টানা গাড়ির চালক। এমনকি হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষের কাজ বন্ধ করে দেয়া হবে। তার পরিবর্তে লেখক বিভাগ খোলা হবে, কারণ এখন থেকে প্রতিনিয়ত বিশেষ নির্দেশনাবলি লেখা হবে, নানানভাবে। একারণে উঠতি লেখকদের মধ্যেই কিঞ্চিত চাঞ্চল্যতা দেখা গেছে। তবে এরা বিশেষ চিন্তিত যে, কি করে জলদি খোঁচা খোঁচা দাড়ি গোঁফ গজানো যায়।
কানাঘুষা হচ্ছে, সিটি কর্পোরেশনের ক্লিনার, ড্রাইভার, কীটনাশক ওষুধ ছিটানোকারী ও হরিজনরা একসাথে আন্দোলনের ডাক দেবে। কিন্তু পাক্কা খবর না পাওয়া পর্যন্ত তারা এখনও আন্দোলনের দিনক্ষণ ঠিক করে উঠতে পারেনি। ভিতরে ভিতরে এরিমধ্যে কেউ কেউ অন্যবিভাগে কাজের তদবির শুরু করে দিয়েছে।
সিটি কর্পোরেশনের পরিবর্তনের এই উড়ো খবরে বাজার আগুন লেগেছে ঝাড়ু, মশারি ও কীটনাশক বিক্রেতাদের দোকানে দোকানে। দোকানীরা ঝাড়ু, মশারি ও কীটনাশক দাম বাড়িয়ে দিয়েছে, যা নিম্নবিত্তের নাগালের বাইরে। মশারী ব্যবসায়ীরা মেয়র সাহেবদের জন্য মশারীময় সংবর্ধনা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারা অচিরেই বাজারে মেয়রদের নামে নতুন মশারীর আনবে বলে জানান।
মশারী ব্যবসায়ীরা আনন্দিত হলেও শহরের বাসাবাড়ির বাঁধা বুয়ারা খেপে আগুন। কারণ তাদের ঘন ঘন বাড়ির আশেপাশে পরিস্কার করতে হচ্ছে। ছুটা বুয়ারা বাড়তি কাজে অনীহা দেখাচ্ছে, কেউ কেউ বেতন বাড়িয়ে নিচ্ছে কাজ ছেড়ে দেবার হুমকি দিয়ে। তবে এতো কিছুর মধ্যে ভাল খবর হল বাসাবাড়ি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গাড়ির চালকরা কাজে ফাঁকি দিচ্ছে না, তারা মালিকরা না বলতেই গাড়ি ধুয়ে রেডি রাখছে। টাইমলি হাজির হচ্ছে, এমনকি অতিরিক্ত সময়ের ডিউটিও তারা হাসি মুখে দিচ্ছে।
সাংবাদিকরা, রাজধানী ঢাকার মেয়রদ্বয়কে হন্যে হয়ে খুঁজছেন তাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি মনে করিয়ে জবাবদিহিতার জন্য। শোনা গেছে মেয়র সাহেবরা বলেছেন, আরে নির্বাচনী ওয়াদা করতে হয় পাবলিকের বোকা বানানোর জন্য। ভোগে বেটারা বোকামীর জন্য। উনারা আরো বলেছেন, আরে আমরা সজ্জনব্যক্তি, আমাদের পারিবারিক শিক্ষা আছে। আমরা কেমনে মানুষের বাড়ি বাড়ি যাব। মানুষের বাড়ি বাড়ি যেয়ে হাড়ির খবর করা বাজে কাজ, এসব আমরা শিখিনি। আমরা পাবলিকের হাতে হারিকেন ধরাই দিতে পারি কিন্তু মানুষের ঘরে যেয়ে তাদের প্রাইভেসী নষ্ট করতে পারি না। জ্বরের সিজন চলে গেলে পাবলিক আবার সব ভুলে যাবে। কারণ এরাসব গোল্ড ফিস মেমরির। আবার ঝাড়ু হাতে রাস্তা ঝাড় দিবো, মনভুলানো বক্তৃতা দেব পাবলিক ফিদা হয়ে ভোট দিয়ে দিবে।
নতুন চাকরি বা কর্মসংস্থানের সংবাদ ও মেয়রদ্বয়ের বক্তব্যের বিষয়ে আমজনতার কি মতামত জানা যায়নি কারণ সংবাদ দাতার মোবাইল চার্জ শেষ হয়ে গেছে আর শহরে দীর্ঘক্ষণ ইলেক্ট্রিসিটি না থাকার কারণে সে মোবাইল চার্জও দিতে পারছে না। আমাদের সংবাদদাতা ট্রাফিক জ্যামে আটকে পড়ায় সময় অফিসে আসতে পারছে না, তাই আমরাও বাকি সংবাদ পরিবেশন করতে পারছিনা। তবে খবর পাবার সাথে সাথে আপনাদের জানানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করে এখন এখানেই শেষ করছি।
(কাল্পনিক এই সংবাদের সাথে বাস্তবের কোন ঘটনার মিল নাই, মিলে গেলে তা কাকতালীয়।)
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)