এক কৃষককে ২০০৭ সালে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে সন্ত্রাসী হিসেবে দেখিয়ে ‘ক্রসফায়ারে হত্যার’ অভিযোগে একজন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সহ ৩ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালের ১৯ জানুয়ারি কুষ্টিয়ায় ওই ৩ পুলিশ সদস্য কৃষক দাউদকে তার নামে মামলা আছে বলে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়। ক্রসফায়ারে হত্যার ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা দাবি করে তারা। দাউদের পরিবার টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ২০ জানুয়ারি তাকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়। দশ বছর আগে কুষ্টিয়ায় ঘটে যাওয়া ওই ঘটনায় আদালতের পদক্ষেপের পরে জনমনে প্রশ্নবিদ্ধ ক্রসফায়ার বা তথাকথিত অস্ত্র উদ্ধারের নামে হতাহতের ঘটনা আইনের দৃষ্টিতেও প্রশ্নবিদ্ধ হলো। ২০০৪ সালে শুরু হওয়া এই ক্রসফায়ার সংস্কৃতির বৈধতা ও কার্যকারিতা নিয়ে সেসময়ই থেকেই প্রশ্ন রয়েছে। গেল ১২ বছরে তথাকথিত ক্রসফায়ারে প্রায় ১ হাজার ৮০০ মানুষ নিহত হয়েছে। নিহত হওয়া মানুষদের মধ্যে অনেকে ভয়ঙ্কর আসামী, জঙ্গী সংগঠনের সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতার পাশাপাশি নিরীহ মানুষও রয়েছে। নিহতদের অনেকের পরিবারের পক্ষ থেকে কুষ্টিয়ার ওই ঘটনার মতো জিম্মি করে চাঁদা দাবি ও পরে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার অনেক ক্রসফায়ারের পরে ওইসব ঘটনার জন্য শুকরিয়া আদায় ও মিষ্টি বিতরণের ঘটনাও আমরা দেখেছি। অপরাধী-জঙ্গিরা ভয়ঙ্কর, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই; অনেকসময় কেউ কেউ বলে থাকেন, এসব অপরাধীদের আবার মানবাধিকার কী? এদের এভাবেই বিচার হওয়া উচিত। আমাদের এ ধরণের চিন্তার ফাঁক দিয়েই অনেকসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্য ও তাদের নাম ভাঙিয়ে দুস্কৃতিকারীরা কুষ্টিয়ার ওই ঘটনার মতো সুযোগ নিচ্ছে। প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাবমূর্তি। দেশে ও বাকি বিশ্বে সরকারের ইমেজ ভয়ঙ্করভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। অপরাধীদের যে পরিচয়ই হোক, যে অপরাধেই সে অভিযুক্ত হোক না কেন, যে দোহাই/পরিস্থিতিতে তারা নিহত হচ্ছে, তা দেশের সংবিধান ও আইনের পরিপন্থী। প্রতিটি অপরাধের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে এবং যদি দেশের প্রচলিত আইনে আদালতে বিচার হয়, তাহলে এ অবস্থার পরিবর্তন আসবে। আমরা যেমন বিচারহীনতা চাই না তেমনি আমরা চাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করুক, প্রতিটি অপরাধে প্রকৃত অপরাধী আদালতের মাধ্যমে শাস্তি পাক, হয়রানি থেকে সাধারণ মানুষ মুক্ত থাকুক, জনমনে শান্তি বিরাজ করুক।