এক বছরে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ ১০০ মিলিয়ন ডলার বা ৮০০ কোটি টাকা বেড়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা (আঙ্কটাড)। সংস্থাটির ‘ওয়ার্ল্ড ইনভেস্ট রিপোর্ট ২০১৭’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁয় প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)।
অনুষ্ঠানে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মুনসুর আঙ্কটাড প্রতিবেদনের উপর একটি কী-নোট উপস্থাপন করেন। এতে তিনি বলেন, ২০১৬ সালে বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ হয়েছে ২ হাজার ৩শ’ ৩২ দশমিক ৭২ মিলিয়ন ডলার যা আগের বছরের চেয়ে ৪ দশমিক তিন নয় শতাংশ বেশি। ২০১৫ সালে বিনিয়োগ এসেছিল ২ হাজার ২শ ৩৫ দশমিক ৩৯ ডলার। টেলিকমিউনিকেশন, টেক্সটাইল, বিদ্যুৎ, ব্যাংকিং, জ্বালানী, কৃষি, ওষুধ, চামড়া ও কম্পিউটার সফটওয়ারসহ বিভিন্ন খাতে এসব বিনিয়োগ এসেছে।
এ সময় তিনি বলেন, টেলিকমিউনিকেশন খাত থেকে অনেক বেশি কর আসে। কিন্তু এক্ষেত্রে কর্পোরেট ট্যাক্স ৪৫ শতাংশ। তুলনামূলক এই কর হার বেশি।
আঙ্কটাডের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগ সবচেয়ে বেশি হয়েছে আফ্রিকার দেশ অ্যাঙ্গোলায়। ২০১৬ সালে দেশটিতে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১৪ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে আফ্রিকা মহাদেশের দুটি দেশ ইথিওপিয়া ও মোজাম্বিক। দেশ দুটিতে গত বছর বিদেশি বিনিয়োগ ছিল তিন দশমিক ২০ ও তিন দশমিক শূন্য নয় বিলিয়ন ডলার।
চতুর্থ অবস্থানে থাকা বাংলাদেশে ২০১৬ সালে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিল দুই দশমিক ৩৩ বিলিয়ন (২৩৩ কোটি) ডলার। আর দুই দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে পাশের দেশ মিয়ামনার। এ বিষয়ে আহসান এইচ মুনসুর বলেন, ইথিওপিয়া ও মোজাম্বিকে কেন এত বেশি বিনিয়োগ হচ্ছে। সে বিষয়ে বাংলাদেশকে গবেষণা করতে হবে।
এরপর বাংলাদেশ উইমেন চেম্বারের সভাপতি সেলিমা আহমেদ বলেন, কর্পোরেট ট্যাক্সের ক্ষেত্রে কিছু বৈষম্য রয়ে গেছে। এখাতে ৪৫ শতাংশ কর দিতে হয়। কিন্তু টেলিকমিউনিকেশন খাতে যুক্ত রয়েছে ছোট ছোট আইটি ও সফটওয়ার উদ্যোক্তা। ফলে ছোটদেরও ৪৫ শতাংশ কর পরিশোধ করতে হয়। এতে ছোট উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই এই আইনে কিছু সংশোধন আনা জরুরী।
আঙ্কটাডের প্রতিবেদনকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম বলেন, দেশে বিনিয়োগ বাড়ছে। নিশ্চয় এটি বাংলাদেশের জন্য সুখবর। কারণ উন্নয়নশীল বেশিরভাগ দেশে গতবছর বিনিয়োগ কমলেও বাংলাদেশে ৯৭ মিলিয়ন ডলার বেড়েছে।
বিনিয়োগ আরো বাড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১৭ সালের জন্য প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার বিদেশি বিনিয়োগের আশ্বাস পাওয়া গেছে। এর মধ্যে যদি অর্ধেকও বিনিয়োগ করা হয়, চলতি বছর বিদেশি বিনিয়োগ হবে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার। কারণ আগের তুলনায় বাংলাদেশ অনেক সক্ষমতা অর্জন করেছে, বিদ্যুৎ ও অবকাঠমোগত উন্নয় হয়েছে, ব্যবসার পরিবেশ উন্নত ও সেবার মান বেড়েছে। তাই বিনিয়োগে বিদেশিরা আগ্রহী হচ্ছে।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, বৈশ্বিক ব্যবসা সহজিকরণ সূচকে বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৬তম। আশাকরি আগামী ৫ বছরের মধ্যে তা একশ’র নিচে নেমে আসবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিখি ছিলেন এসডিজি’র প্রধান সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ। সম্প্রতি কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের বিমানবন্দরকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছে। এখাতে কি পদক্ষেপ নেযা হয়েছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিমানবন্দরে ব্যবস্থানা নিয়ে যথেষ্ট অসন্তোষ রয়েছে। এটা নিয়ে বহু কথা হয়েছে। এক্ষেত্রে কয়েকটি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আশাকরি অচিরেই সমস্যা সমাধান হবে।