নভেম্বর মানেই যেন কনকনে হাওয়া, কুয়াশায় মোড়ানো সকাল আর মিষ্টি রোদের দুপুর। সেই নভেম্বরেই যদি আবার প্রকৃতির মুখ গম্ভীর হয়ে যায়, বেরিয়ে আসে দু’এক ফোঁটা কান্নাও, তবেই জেঁকে বসে শীত। মানবীয় সম্পর্কের সর্বোচ্চ শীতলতা বোঝাতে বিশ্বখ্যাত ব্যান্ড ‘গানস রোজেস’ তাদের কালজয়ী গানটিতে রূপক হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন এই নভেম্বরের বৃষ্টিকেই। ১৯৯২ সালে ‘নভেম্বর রেইন’ নামের বিখ্যাত গানটির বিশ্বজয়ের পর নভেম্বরে বৃষ্টি মানেই প্রেমিককুলের মনে সৃষ্টি হয় আলাদা দ্যোতনা।
চলছে নভেম্বর। পেরিয়ে গেছে মাসের অর্ধেকটা। কাঙ্ক্ষিত সেই নভেম্বর রেইনও এলো। কিন্তু নেই কেবল সেই শীতলতা। কনকনে হাওয়া থেকে নিজেদের আড়াল করতে গায়ে গরম কাপড় জড়ানোর বদলে, গরম দূর করতে উল্টো বাতাসের দিকেই মুখ ফিরিয়ে থাকছে সবাই। সকালেই হাসছে তপ্ত রোদ, কুয়াশার সঙ্গে নেই সূর্যের সেই চিরচেনা লুকোচুড়ি। কুয়াশার বদলে নগরবাসী অতিষ্ট শুষ্ক রাজপথের সীমাহীন ধুলোর ধোঁয়াশায়।
অক্টোবরের শুরু থেকেই অর্থাৎ বাংলা কার্তিক মাসের মাঝামাঝি থেকেই এদেশে নেমে আসতে শুরু করে শীত। কার্তিক পেরিয়ে শুরু হয়েছে অগ্রহায়ন। পঞ্জিকার হিসেবে শুরু হয়েছে হেমন্ত। কিন্তু প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে টের পাওয়ার উপায় নেই যে এটা হেমন্তকাল। হেমন্তের স্বাভাবিক প্রকৃতির সেই চিরচেনা আমেজের ছিটেফোঁটাও চোখে পড়ছে না এবার। সারা দেশেই যেন এখনও গ্রীষ্মের আমেজ।জনসংখ্যাবহুল রাজধানী ঢাকায় সে আমেজ আরও বেশি। কর্মস্থলে যাওয়া আসা লোকজন পাবলিক বাসে হাসফাঁস করছে; দরদরিয়ে ঝড়ছে ঘাম। শীতের আকুলতা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। তবু দেখা মিলছে না গরম কাপড় আর লেপ/কম্বল নামিয়ে আনা শীতের।
শীতের জন্য রীতিমত প্রার্থনারত নগরবাসীর জন্য সুখবর দিতে পারছে না আবহাওয়া অধিদপ্তরও। তারা বলছে শীত আসতে এখনও ঢের বাকি। সারাদেশে শীতের আমেজ হেমন্তের শুরুর দিন থেকে কিছুটা শুরু হলেও রাজধানীতে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহের আগে শীতের দেখা মিলবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে আবহাওয়া অফিস থেকে।
ঋতুর এই অস্বাভাবিক আচরণকে পরিবেশবিদরা দেখছেন বিশ্ব উষ্ণায়নের ফল হিসেবে। তারা বলছেন শুধু বাংলাদেশেই নয় ইস্ট ওয়েস্ট উভয় অঞ্চলেই প্রকৃতি এমন বিরূপ আচরণ করছে। ইউরোপ ও জাপানেও শীতের প্রকোপ কমে যাচ্ছে। যার কারণে সেখানকার তাপমাত্রাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার কারণেই দেখা দিচ্ছে ঋতুগত বিশৃঙ্খলা।
বিশ্ব উষ্ণায়নের অনিবার্য ফল হিসেবে তবে কি চরিত্র হারালো নভেম্বর রেইনও!
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)